ভাল নেই মদন মিত্র। এখনও তাঁর জ্বর রয়েছে। কমেনি শ্বাসকষ্ট। মঙ্গলবার চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, যে ওষুধ তাঁকে দেওয়া হয়েছে তাতে খুব বেশি একটা কাজ হয়নি। সব মিলিয়ে তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের জ্বর এসেছিল রবিবার। সোমবার তার প্রকোপ বাড়ে। এতটাই যে, জ্বরের ঘোরে ভুল বকেছেন। এমনকী চিনতে পারেননি নিকটাত্মীয়দেরও। বেড়েছে শ্বাসকষ্ট। সোমবার সকালে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হতে থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিন থেকে সিসিইউ-এ সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক রয়েছে বলে জানিয়েছেন পিজি-কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে পরিবহণমন্ত্রীর জামিনের আর্জি নাকচ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে জেলে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল আইনজীবী মহল। মন্ত্রীর তরফেও তাতে সায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রবিবার গভীর রাত থেকে যে-ভাবে মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, তাতে তাঁর জেলে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কিছু দিনের জন্য অনিশ্চিত হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। মদন-ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, মন্ত্রী-পদে থেকে যাওয়ায় এবং পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে থাকায় সিবিআইয়ের পক্ষে মদনবাবুকে প্রভাবশালী প্রমাণ করা অনেক সহজ হয়েছে। ‘‘সেই জন্যই ওঁকে জেলে ফেরানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। কিন্তু শরীরের যা অবস্থা দাঁড়াল, তাতে বেশ কিছু দিনের জন্য দাদা ফের হাসপাতালেই আটকে গেলেন,’’ বেশ উদ্বিগ্ন শোনাল ওই নেতার গলা।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গত ১২ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন মদনবাবু। কিছু দিন পুলিশি হাজতে কাটানোর পরেই তাঁকে পাঠানো হয় জেলে। সেখানে দিন পনেরো থাকার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এসএসকেএমে পাঠানো হয় মন্ত্রীকে। সেখান থেকে তিনি জেলে ফেরেন সপ্তাহ দুয়েক পরে। তবে বেশি দিন গারদে থাকতে হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে ফের এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। তার পর থেকে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন তিনি। প্রথম চার মাস ছিলেন ২০ নম্বর কেবিনে। মাসখানেক ধরে তাঁর ঠিকানা উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিন।
মন্ত্রী আগের থেকে ভাল আছেন বলে এ দিন জানান এসএসকেএমের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘মদন মিত্রের জ্বর হয়েছে। তার সঙ্গে শ্বাসকষ্টও রয়েছে। এক্স-রে করে মন্ত্রীর বুকে নিউমোনিক প্যাচ পাওয়া গিয়েছে। তাঁর রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। তার রিপোর্ট তুলনায় ভাল।’’
মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় জ্বর এসেছিল তাঁর। রাতে জ্বর বাড়তে বাড়তে ১০৩ ডিগ্রি হয়ে যায়। তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। ভুল বকতে শুরু করেন। এ দিন সকালে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর পরেই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের তরফে মন্ত্রীর বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। বাড়ির লোকজন আসার পরেই মন্ত্রীকে সিসিইউ-এ সরানো হয়। কৃত্রিম ভাবে তাঁকে অক্সিজেন দিতে থাকেন পিজি-র কর্মীরা। চলছে নেবুলাইজারও।
অসুস্থতার কারণে এ দিন আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি সারদা কেলেঙ্কারিতে আর এক অভিযুক্ত, সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনি আছেন প্রেসিডেন্সি জেলে। জেল সূত্রের খবর, পায়ের একটি পুরনো ব্যথা ফের চাগাড় দিয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে তাতেই ভুগছেন কুণাল। এ দিন তার সঙ্গে শুরু হয় পেটের গণ্ডগোল। তাই আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়নি ওই সাংসদকে।