অর্ণব রায়। ফাইল চিত্র।
যথাসম্ভব গোপনীয়তা বজায় রেখে, কার্যত চুপিসারে ভোটের আগের রাতে কৃষ্ণনগরে সরকারি আবাসনে ফিরেছেন অর্ণব রায়। তবে ভোটের দিন কোথাও তাঁকে দেখা যায়নি। প্রতিবেশীদের মুখোমুখি হননি। যোগাযোগ করেননি সহকর্মীদের সঙ্গে।
মঙ্গলবার তাঁর ফ্ল্যাটে গেলে সাংবাদিক দেখে অস্বস্তিতে পড়েছেন, এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আচমকা তাঁর অন্তর্ধানের কারণ কি জিজ্ঞাসা করায় জবাব দিয়েছেন, “দুঃখিত, এই মুহূর্তে আমি কিছুই বলতে পারব না।”
ডব্লিউবিসিএস অফিসার অর্ণব নদিয়া জেলা প্রশাসনের একশো দিনের কাজ প্রকল্পের নোডাল অফিসার। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাঁকে ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের অফিসার ইনচার্জ করা হয়েছিল। ভোটের কয়েক দিন আগে গত ১৮ এপ্রিল ইভিএমের কমিশনিং এর শেষ দিনে জেলা প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মীর হাতে চাবির গোছা তুলে দিয়ে তিনি বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর উধাও হয়ে যান। ইভিএমের দায়িত্বে থাকা অফিসার এ ভাবে নিখোঁজ হওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অর্ণববাবুর স্ত্রী ডব্লিউবিসিএস অফিসার অনীশা যশ কোতোয়ালি থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ ওঠে, জেলাশাসকের ধমক খেয়ে মানসিক অবসাদে অর্ণব উধাও হয়েছেন। যদিও জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত তা মানতে চাননি। অনীশাও দাবি করেন, অর্ণবের কোনও মানসিক অবসাদ ছিল না। ক্রমশ এই অন্তর্ধান রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠতে থাকে। আসরে নামতে বাধ্য হয় সিআইডি। প্রায় সপ্তাহখানেক পরে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। সিআইডি দাবি করে, তিনি সাত দিন হাওড়া স্টেশনে ছিলেন। আরও জানায়, কাজের চাপ সহ্য করতে না-পেরে তিনি চলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু আনন্দবাজারের হাতে একটি সিসি টিভি ফুটেজ আসে যেখানে দেখা যায়, সিআইডি যে দিন তাঁকে হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করেছে বলে দাবি করছে সে দিন সকালে তিনি মিষ্টির প্যাকেট হাতে শ্বশুরবাড়ির আবাসনে ঢুকছেন। যদিও এই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
ওই ঘটনার পর থেকে আর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি অর্ণব বা অনীশা। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর ফ্ল্যাটের বেল বাজাতে অর্ণবই দরজা খোলেন এবং সাংবাদিক দেখে থতমত খেয়ে যান। দরজা আগলে দাঁড়িয়েও পড়েন। বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে মিডিয়া চাইছি না।’’ কোথায় ছিলেন এত দিন? স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন নাকি অন্য কোনও গল্প আছে? প্রশ্ন শুনে শুকনো হেসে চুপ করে থেকেছেন। আবার কবে কাজে যোগ দেবেন জানতে চাওয়ায় বলেন, “জেলাশাসকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। এ বার দেখা করব। তিনি যা বলবেন সেই মত পদক্ষেপ করব।” দরজা বন্ধ করার আগে হলেন, “কঠিন সময়ে আমার পরিবারের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।”