জট ছিলই। তার জেরে এ বার প্রায় বেলাইন হয়ে যাওয়ার উপক্রম বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া। সিপিএমের গত বারের জেতা রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে প্রার্থী দেওয়ার দাবি ছাড়তে নারাজ কংগ্রেস। আর জেতা আসন ছেড়ে দিয়ে সমঝোতায় যেতে আগ্রহী নয় সিপিএম। এই পরিস্থিতিতে শেষ চেষ্টা হিসেবে বামেদের সঙ্গে আলোচনা চালানোর জন্য প্রদেশ সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে দায়িত্ব দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। সময় দেওয়া হয়েছে রবিবার পর্যন্ত। দুই শিবিরের বড় অংশই অবশ্য মনে করছে, জট খোলার আশা এখন ক্ষীণ।
কংগ্রেস এবং সিপিএমের হাতে মিলিত ভাবে এখন আছে রাজ্যের ৬টি লোকসভা আসন। ওই আসনগুলি যে যার হাতে রেখে সমঝোতার আলোচনা এগোতে চেয়েছিল বামেরা। বল পাঠানো হয়েছিল কংগ্রেসের কোর্টে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচন কমিটির বৈঠকে বুধবার দীর্ঘ আলোচনার পরেও রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদের জট খোলেনি। দুই আসনের দাবি যে কংগ্রেস বজায় রাখছে, তা জানিয়েই এ দিন বিধান ভবনে বৈঠকের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম ২০২১ সাল পর্যন্ত বামেদের সঙ্গে জোট হোক। কিন্তু বামেরা শুধু এ বারের লোকসভা ভোটের জন্য আসন সমঝোতা চায়। আমাদের দলের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে সেটা কী ভাবে করা যায়, দেখা হবে।’’
সিপিএমের তরফে প্রকাশ্যে এ দিন কেউ মুখ খোলেননি। তবে রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদের দাবি থেকে কংগ্রেস সরছে না জেনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘জেতা আসন ছেড়ে দিয়ে সমঝোতায় গেলে তো আমাদের মর্যাদা নিয়ে দলের ভিতরেও প্রশ্ন উঠবে!’’ আলিমুদ্দিনে আজ, বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রশ্নে কী করণীয়, সেই অবস্থান চূড়ান্ত করবে সিপিএম। সেই সঙ্গেই বার্তা দেওয়া হবে ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার।
প্রদেশ নির্বাচন কমিটির বৈঠকে এ দিন বিরোধী দলনেতা মান্নান ছাড়া প্রথম সারির সব নেতাই উপস্থিত হয়ে তাঁদের মত জানিয়েছেন। ছিলেন বাংলার ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র নেতা গৌরব গগৈও। পরে গৌরব বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী ফের পরিষ্কার করে দিয়েছেন, বাংলায় ভোটের রণকৌশল বাংলার কংগ্রেসকেই ঠিক করতে হবে। প্রদেশ নেতৃত্ব যা উচিত মনে করবেন, এআইসিসি তাকে সমর্থন করবে।’’
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে কার্যকরী সভাপতি দীপা দাশমুন্সি জানান, বামেদের হাত ধরতে আপত্তি নেই। তবে রায়গঞ্জ আসন কংগ্রেসকে লড়তে দিতে হবে। প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরী যুক্তি দেন, মুর্শিদাবাদে তৃণমূল এবং সিপিএম ছেড়ে লোকজন কংগ্রেসে আসছে। ওখানে বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করলে কংগ্রেসের প্রতীকেই লড়াই হওয়া উচিত। কেন তাঁরা সিপিএমের জেতা আসন দাবি করছেন, সেই প্রশ্নের জবাবে পরে সোমেনবাবুও বলেন, ‘‘রায়গঞ্জে কংগ্রেস ১৬০০ ভোটে হেরেছিল। প্রতি বুথে আরও ৫টা করে ভোট পেলেই ফল অন্য হত। মুর্শিদাবাদেও আমরা হেরেছিলাম শুধু নদিয়ার করিমপুরে খারাপ ফলের জন্য।’’