ভোট চাইছেন অসিত, বিলি নকুলদানাও

লোকসভা নির্বাচনে নকুলদানার নিদান বারবার শোনা গিয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গলায়। রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে জলঘোলাও হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৫
Share:

বোলপুরে অসিত মালের প্রচারে নকুলদানা বিলি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

যার ঠাঁই এত দিন একান্তই ছিল পুজোর ঘরে, সেটাই এখন শাসকদলের প্রচারের সঙ্গী। তা নিয়ে বিতর্কও দানা বাঁধছে।

Advertisement

নাম তার নকুলদানা। মঙ্গলবার বোলপুরে তৃণমূলের ভোটের প্রচারে ফের দেখা গেল নকুলদানা বিলি। এ দিন বোলপুর কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী অসিত মালের সমর্থনে শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে নকুলদানা বিলি করা হয় ভোটারদের মধ্যে। এই নকুলদানা বিলিকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। বিরোধীদের দাবি, নকুলদানা বিলি করে আসলে ভোটারদের ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, প্রসাদ বিলিতে ভয় কিসের!

লোকসভা নির্বাচনে নকুলদানার নিদান বারবার শোনা গিয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গলায়। রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে জলঘোলাও হয়েছে। নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত গড়িয়েছে সেই জল। ‘নকুলদানা’ নিয়ে নির্বাচন কমিশন তাঁকে শো-কজও করেছে। শো-কজের উত্তরে সেই ‘প্রসাদ’ তত্ত্বকেই ঢাল করেছেন অনুব্রত। জানিয়েছেন, কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনী থেকে ভোটার সকলেই নকুলদানা খাওয়াতে চান। দলের কর্মীরাও জেলা সভাপতির সেই ‘ইচ্ছা’কে মান্যতা দিতে কোমরবেঁধে নেমে পড়েছেন। নকুলদানা, জল হাতে নিয়ে শহরবাসী, পথচারীদের বিলি করছেন তাঁরা। তৃণমূলের ভোটের প্রচারেও সঙ্গীও হয়েছে এই নকুলদানা।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মঙ্গলবার বোলপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে শুঁড়িপাড়া বিবেকানন্দ মোড় থেকে ভোট প্রচার শুরু করেন তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল। কয়েকশো তৃণমূল কর্মী সঙ্গে ছিলেন। এক দিকে প্রার্থী যখন হাতজোড় করে ভোট চাইছেন, ঢাকের বাদ্যির সঙ্গে সঙ্গে নকুলদানা বিলি করেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বাদল সাহা। প্রায় চার কেজি নকুলদানা বিলি করা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রামপ্রসাদ দাসের দাবি, ‘‘এই ভাবে নকুলদানা বিলি করে মানুষকে এক প্রকার ভয় দেখানো চলছে। ওরা মানুষের মন জয় করতে পারবে না জেনেই ভীত সন্ত্রস্ত পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই নকুলদানা কিংবা গুড়-বাতাসা এ সমস্ত কথাবার্তা মানুষ ভাল চোখে নিচ্ছেন না। আমার মনে হয় এ বিষয়ে কমিশনের নজর দেওয়া দরকার।’’ দলের জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন সবই জানতে ও বুঝতেপারছে। তারাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এ ব্যাপারে।’’

বিরোধীদের আরও দাবি, তৃণমূলের প্রার্থীও নকুলদানা বিলি করেছেন। যদিও অসিতবাবু বলেন, ‘‘আমি বিলি করিনি। যেহেতু এ দিন ওই ওয়ার্ডের শিবমন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচারকাজ শুরু করি, তাই কর্মী-সমর্থকেরা প্রসাদ হিসাবে নকুলদানা দিয়েছেন বাসিন্দাদের। এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই।’’ অনুব্রত নিজেও বলছেন, ‘‘কেউ কঙ্কালীতলায় পুজো করছে, কেউ বা ডাঙ্গালিতলায় পুজো করছে। তাই প্রসাদ হিসেবে নকুলদানা বিলি করতেই পারে।’’ এ দিনই মুরারই ২ ব্লকের জনসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অনুব্রত বলেন, “ভোটের দিন বুথে বুথে নকুলদানা দেওয়া হবে।’’

বুথে তো কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে?

“নকুল দানা প্রসাদ তো! কেন্দ্রীয় বাহিনীও খাবে। আরাম পাবে। জল চাইলে জলও দেব।’’—বলে দিচ্ছেন নকুলদানাকে পুজোর ঘর থেকে বার করে দলের প্রচারের হাতিয়ার করে তোলার কারিগর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement