রত্না চট্টোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়
বরাবর বাবা যে ঘরে বসে লোকজনের অভাব-অভিযোগ শুনতেন, টালমাটাল চলায় বেশ কিছু দিন ফাঁকা ছিল সেটি। কিন্তু সেই
অবস্থা বেশি দিন থাকেনি। কারণ, কিছু দিন পর থেকেই মা সেখানে বসতে শুরু করেছেন। অবশ্য না বসে উপায় কী! এত দিন যে লোকগুলো বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন, তাঁরা যাবেন কোথায়! তাই মা-ই তাঁদের অভাব-অভিযোগ শোনেন এখন। তাঁরাও এখন মা-কেই ভরসা করেন!— বলছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র সপ্তর্ষি।
সপ্তর্ষি ও তাঁর বোন সুহানির কাছে বাবা-মায়ের পারস্পরিক অবস্থান পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। জায়গা বদল হয়েছে তাঁদের। সেই পরিবর্তিত অবস্থানটা আরও নজরে পড়ছে চলতি লোকসভা নির্বাচনের সময়ে। কারণ, বেহালায় প্রচারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। শোভনের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচন কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। আর শোভন এখন রাজনৈতিক আলোর অন্তরালে। আগে
যেমনটা রত্না থাকতেন পারিবারিক পরিসরের অন্দরেই। সপ্তর্ষি বলছিলেন, ‘‘এত দিন মা, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে আমাদের পরিবারে যে টালমাটাল চলেছে, তাতে বাবা-মায়ের অবস্থান বদলে গিয়েছে। এখন রত্না চট্টোপাধ্যায় নিজস্ব পরিচয়েই রাজনীতি করছেন।’’ আর সুহানির কথায়, ‘‘এত জন লোক বাবার উপরে ভরসা করতেন। তাঁরা কোথায় যাবেন? তাঁদের সকলের কথা মা শুনছেন, সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তাঁদের সমস্যা সমাধানের।’’
আগের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বাবাকে কোনও দিন বাড়িতে দেখতে পাননি সপ্তর্ষি। যদিও দেখার কথাও নয়। কারণ, লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারের একটা বড় দায়িত্ব থাকত তাঁর উপরে। প্রার্থীর জন্য জনসভা, মিছিলের আয়োজন করা থেকে শুরু করে কর্মী-সমর্থক জোগাড় করা, প্রচারের মূল দায়িত্বের অনেকটাই সামলাতেন শোভন। সপ্তর্ষির কথায়, ‘‘এখন যেমন মা সামলাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালেই তো ঘুম থেকে উঠে দেখি মা প্রচারের কাজের জন্য বেরিয়ে গেলেন।’’
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মন্ত্রী-মেয়র পদ থেকে পদত্যাগের পরে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আর তেমন ভাবে দেখা যাচ্ছে না শোভনকে। রাজনীতিকদের একাংশের বক্তব্য, ‘সচেতন ভাবেই’ নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। ফলে শোভন তৃণমূলের ‘সঙ্গ ত্যাগ’ করছেন কি না, তা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে জল্পনাও শুরু হয়েছে। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ প্রাক্তন মেয়র।
কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের মতো এমন ‘হাই ভোল্টেজ ইভেন্ট’-এ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি কোনও প্রভাব ফেলছে না?
সপ্তর্ষির উত্তর, ‘‘৩৫ বছর ধরে ওই রকম স্তরের রাজনীতি করার পরে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে কেউ যদি নিজেকে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চান, তা হলে সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। আমাদের এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই।’’ সুহানি বলছেন, ‘‘আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’’
এখন মায়ের রুটিনটাই পুরোপুরি বদলে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ছেলে-মেয়ে। আগে রত্নাদেবী সংসারের পাশাপাশি ব্যবসা সামলাতেন। এখন রত্নাদেবী সংসারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। সকাল সাতটার মধ্যে উঠে যাচ্ছেন। তার পরে নিজের ব্যায়াম করা। একটু বিশ্রাম নিয়েই স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে তাঁদের সমস্যা শোনা।
লোকসভা নির্বাচনের মরসুমে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারের আয়োজন করা। যেমন এ দিনই সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এখন মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি।’’
তবে মেয়ের উপরে লোকসভা নির্বাচনের যে দায়িত্ব পড়েছে, তা তিনি সামলে দিতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন রত্নাদেবীর বাবা মহেশতলার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান দুলাল দাস। দুলালবাবু বলছেন, ‘‘রত্না জন্ম থেকে রাজনীতি দেখছে। ফলে সেটা ওর ভিতরেই আছে। ও সুন্দর সামলাচ্ছে সব কিছু।’’
আর সপ্তর্ষি বলছেন, ‘‘রাজনীতিতে মায়ের আসাটা এক দিক থেকে ভাল হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মায়ের দাঁড়ানোটা দরকার ছিল। কারণ, কারও শূন্য স্থানই ফাঁকা রাখা যায় না!’’