সেবা: প্রচার থামিয়ে রোগী দেখছেন রেজাউল করিম। শনিবার খয়রাশোলে। —নিজস্ব চিত্র।
শনিবারের গ্রামীণ হাট। ভিড় জমেছে মানুষের। ভোট প্রচারে বেরিয়ে জনসংযোগের জন্য এমন সুযোগ মেলে না সচরাচর।
সেই হাটে-ই অসুস্থ মানুষের ডাকে প্রচার ফেলে চিকিৎসায় ব্যস্ত হলেন প্রার্থী— এ দিন সকালে খয়রাশোলের হজরতপুরে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বামপ্রার্থী তথা চিকিৎসক রেজাউল করিমকে এমনই ভূমিকায় দেখলেন গ্রামবাসী।
এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ হজরতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েক জন নেতা-কর্মীর সঙ্গে হেঁটে গ্রামে প্রচারে ঢোকেন রেজাউল। অলিগলি ঘুরে প্রচার-মিছিল পৌঁছয় হজরতপুর গ্রামীণ হাটে। মাছ, আনাজ থেকে গৃহস্থলির বিভিন্ন পসরা নিয়ে সেখানে তখন বসেছেন বিক্রেতারা। ভিড় জমেছিল ক্রেতাদের। তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করতে করতে এগোচ্ছিলেন বামপ্রার্থী। তখনই ঘটল ঘটনাটি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
‘‘আপনি তো শুনেছি ডাক্তার। দিন কয়েক ধরে পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে, একটু দেখবেন?’’— বাবলু বাউড়ি নামের এক প্রৌঢ় আনাজ বিক্রেতার এমন কথায় থমকে গেলেন রেজাউল। যত্ন করে দেখলেন তাঁকে। দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে ‘প্রেসক্রিপশন’ লিখে ওই বিক্রেতাকে বুঝিয়ে দিলেন, কী ভাবে খেতে হবে ওষুধ। তা দেখে এগিয়ে এলেন বাজারে আসা খয়রাশোলের বড়রা গ্রামের যুবক শেখ খিলাফত। তাঁর গলা ফুলেছে। ফের থমকে গেল প্রচার। পরীক্ষা করে রেজাউল বললেন, ‘‘থাইরয়েডের সমস্যা বলে মনে হচ্ছে। আগে একটা এক্স-রে করাও।’’ এমন ভাবে আরও দুই রোগীকে দেখে, পথ্যের খুঁটিনাটি বুঝিয়ে ফের প্রচারে এগিয়ে গেলেন প্রার্থী। হাটে কথা উঠল— ‘‘ভোট প্রচারে এসেও কর্তব্য ভোলেননি ডাক্তার।’’ এ সবে খুশি প্রার্থীর সঙ্গী সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা।
রেজাউল বলছেন, ‘‘ভোটের ময়দানে নেমেছি ঠিক-ই। কিন্তু সবার আগে তো আমি মানুষ, চিকিৎসকও। কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে দেখবো না!’’ শুধু হজরতপুর নয়, এর পরে বড়রা গ্রামে গিয়েও দু’জনকে পরীক্ষা করে দেখেন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল।
এলাকাবাসী বলছেন— এক সময় খয়রাশোলে প্রবল দাপট ছিল বামেদের। এখন সে সব দিন অতীত। ব্লকের দলীয় কার্যালয়গুলি নিয়মিত খোলাও হয় না। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী নরেশচন্দ্র বাউড়ি জেতার আগে পর্যন্ত এই অঞ্চল থেকে পাঁচ বার জয়ী হয়েছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিজয় বাগদি। এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য— গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ, বোমাবাজি, খুন, বিস্ফোরণে জর্জরিত থাকলেও খয়রাশোলে বর্তমানে শাসকদলই শেষ কথা। আড়ালে কত মানুষ বামেদের সঙ্গে রয়েছেন, তা ভোটবাক্সেই বোঝা যাবে।
এ সব তর্কে না গিয়ে বামনেতারা বলছেন, এ দিন প্রচারে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে। সকালে হজরতপুরই যে তার বেঁধে দিয়েছিল।