উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল পাচন, গুড় বাতাসা এবং নকুলদানা খাওয়ানোর কথা বলে থাকেন। এ বারে তুফানগঞ্জ এসে কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দলীয় কর্মীদের নতুন কথা বলে গেলেন। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় বিরোধীদের দেখা হলেই অথবা বাড়িতে ভোট প্রচারে গেলেই তাদের করলার জুস খাওয়ান।’’
রবীন্দ্রনাথের নামে ভোটের প্রচারে নেমে মাথা গরম করে চড় মারার হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এর আগে। তবে করলার জুস খাওয়ানোর কথা এই প্রথম বললেন। যার ফলে কোচবিহারের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেউ বলছেন, করলার জুস বা করলার পাঁচন তেতো। অর্থাৎ, বিরোধীদের তেতো দাওয়াই দেওয়ার কথা বলেছেন রবি। কেউ আবার হেসে বলেছেন, ভালই তো, করলার জুস স্বাস্থ্যকর। বিরোধীদের এতে রাগ করার কী আছে! বিরোধীদের একটি বড় অংশ জবাবে বলেছে, হতে পারে, কর্মীদের দমদম দাওয়াই দেওয়ার কথাই ঠারেঠোরে বললেন মন্ত্রী। তাঁদের কথায়, ‘‘এ সব অপসংস্কৃতি। আমরাও ওদের ঠান্ডা করার জন্য ডাবের জল রাখব।’’
সোমবার সকালে তুফানগঞ্জ শহরের তৃণমূল কার্যালয়ে সাংগঠনিক সভা ছিল। এই সভায় কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ছাড়াও ছিলেন আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি মোহন শর্মা, তুফানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক ফজল করিম মিয়াঁ এবং স্থানীয় কাউন্সিলর, শহর, ব্লক, অঞ্চল সভাপতিরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই সভায় রবীন্দ্রনাথের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল বিজেপি। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা ভোট প্রচারে এলেই আমাদের কর্মীরা তাদের করলার জুস খাওয়াবে।’’ রবি বলেন, ‘‘এ বছর করলার ফলন খুব ভাল হয়েছে। বিরোধীরা ভোট প্রচারে গেলে মা-বোনেদের বলা আছে, তাঁরা করলার জুস পরিবেশন করবেন।’’ তার পরেই যোগ করেন, ‘‘বিশেষ করে বিজেপিকে তাঁরা এই অভ্যর্থনাটা জানাবেন।’’
কিন্তু হঠাৎ বিজেপিকে বিশেষ অভ্যর্থনা কেন? স্থানীয় লোকজন বলছেন, এ বারের ভোটে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে বিজেপিই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই দাওয়াই দেওয়ার মূল লক্ষ্য তারাই।
এই নিয়ে কোচবিহার জেলা বিজেপি সভাপতি মালতী রাভা বলেন, ‘‘এটা ওদের অপসংস্কৃতি। জনগণ আমাদের পাশে রয়েছে। তেতো, নিমের পাতা এটাই ওদের সংস্কৃতি। তারা করলার জুস পরিবেশন করলে আমরা উল্টো দিকে ডাবের জল নিয়ে তৈরি। ওদের তো ঠান্ডা করতে হবে!’’
সাংগঠনিক ওই আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা ভোট করতে তৈরি। আমরা মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে কাউকে ধরছি না। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কে হবে, তাই নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। আমাদের আশি শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, কুড়ি শতাংশ কিছু দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাবে— এই ভয় দেখাচ্ছে। তাতে লাভ হবে না। আমরা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার— দুই আসনেই বিপুল ভোটে জিতব।’’
সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য তমসের আলি বলেন, ‘‘তৃণমূল জনগণকে তেতো করে তুলেছে। তাই এ সব কথা বলছে। মানুষ তার বিচার করবে ভোটবাক্সে।’’