প্রতীকী ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় ভোট এ বার জঙ্গলমহল-সহ রাঢ়বঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে। মোট ৮ আসনের ভোটে আজ, রবিবার আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন থাকছে ৯৪% বুথে। প্রত্যন্ত এলাকায় এক বা দুই বুথের প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে অবশ্য শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সর্বত্রই গোলমালের খবর পেলে যে ক্যুইক রিঅ্যাকশন টিমের (কিউআরটি) ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর কথা, এই পর্বে প্রথম সেই দলের মাথাতেও রাখা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও পদস্থ আধিকারিককে। আগের পর্বগুলিতে কিউআরটি-র নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ছিল রাজ্য পুলিশের হাতে। কমিশনের হিসেবে, বুথ পাহারা এবং কিউআরটি মিলে আজ থাকছে ৭৪৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
ষষ্ঠ পর্বের ভোটে বাংলায় আজ লড়াইয়ে থাকছেন নানা দলের একাধিক ‘ওজনদার’ প্রার্থী। বাঁকুড়ায় তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মুখোমুখি সিপিএমের অমিয় পাত্র, মেদিনীপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখোমুখি তৃণমূলের মানস ভুঁইয়া, ঘাটালে তৃণমূলের দেবের মুখোমুখি বিজেপির ভারতী ঘোষ। কাঁথিতে তৃণমূলের বর্যীয়ান নেতা শিশির অধিকারী, পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো, ঝাড়গ্রামে সিপিএমের দেবলীনা হেমব্রমদেরও পরীক্ষা আজ। আবার বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে এ বার প্রচার হয়েছে বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে ছাড়াই। প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত সৌমিত্রের এলাকায় ঢোকা বারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। ভোটের আগের দিনও ওই বিজেপি প্রার্থী দুর্গাপুরে বসে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় বহিরাগতেরা ঘাঁটি গেড়েছে।
বাংলার ৮টি-সহ ষষ্ঠ দফায় আজ ৬ রাজ্য ও দিল্লির মোট ৫৯টি আসনে ভোট হবে। দিল্লিতে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত, বিজেন্দ্র সিংহ, বিজেপির গৌতম গম্ভীর, আপের অতীশী মারলেনা। উত্তরপ্রদেশে যাঁদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে, তাঁদের মধ্যে আছেন অখিলেশ যাদব ও মেনকা গাঁধী। মধ্যপ্রদেশের ভোপালে মুখোমুখি হচ্ছেন কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ ও বিজেপির সাধ্বী প্রজ্ঞা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজ্যের ২৫টি আসনে আগের পাঁচ দফার ভোটেই কম-বেশি অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। বুথ দখল, ভোট লুটের অভিযোগের পাশাপাশি প্রার্থীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। ষষ্ঠ দফার ভোটে হামলা করার জন্য তৃণমূল গুন্ডাদের জড়ো করেছে বলে শনিবার দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেছে বিজেপি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে বিজেপি নেতা ওম পাঠক লিখেছেন, আজ ঝাড়গ্রাম এবং ঘাটালে গোলমালের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ভোটার, পোলিং অফিসার এবং বিজেপির পোলিং এজেন্টদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। কমিশনারের কাছে বিজেপির আবেদন, কোনও বহিরাগত এবং দুষ্কৃতী যাতে অবাধ ভোটে বাধা দিতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা হোক। পুলিশ পর্যবেক্ষকরা নিশ্চিত করুন, যাতে পুলিশ অফিসাররা কোনও দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করেন। কলকাতায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কাছে একই ধরনের দাবি জানিয়েছে সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসও।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘ভোটের আগের দিন বিজেপি-সহ বিরোধীরা নিশ্চিত যে, এখানে বিরাট বিপর্যয়ের মুখে পড়তে চলছে। তাই তারা তার আগাম ব্যাখ্যা দিয়ে রাখছে। ওরা ওই অঞ্চলে টাকা বিলি করে এবং বাইরে থেকে লোক এনে ভোট করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষই তা প্রতিহত করেছে।’’
কমিশনের তরফে ফের বলা হয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ভোটের আগের দিন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় গিয়ে একই আশ্বাস দিয়েছেন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর কাছে দাবি জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ড সীমানা ‘সিল’ করার। ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী বীরসিংহ মাহাতো দাবি করেছেন, হোটেল ও লজে বহিরাগতেরা ঘাঁটি গেড়ে থেকে যাতে গোলমাল করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দুবে জানিয়েছেন, জেলার ২২টি থানাতেই কিউআরটি মজুত থাকবে।
কমিশনের কাছে বিজেপির অভিযোগ, বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়েছে। দুবের কাছে বিজেপি অভিযোগ জানায়, প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বাইরের জেলা থেকে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা চলে আসছেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরেও রঘুনাথপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ের সামনে দেখা গিয়েছে আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে। তাঁর অবশ্য দাবি, তিনি আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
ভোটের আগেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ এসেছে দুই মেদিনীপুর থেকেও। এগরায় এ দিন মেদিনীপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপবাবুর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী-সমথর্কেরা। তাঁদের অভিযোগ, গাড়িতে টাকা নিয়ে গ্রামে ঢুকেছিলেন দিলীপ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির দাবি, দিলীপবাবু স্থানীয় একটি গ্রামে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে তৃণমূলের লোকজন তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। তাঁরা বাধা দিলে তাঁদের মারধর করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।