হলদিয়ায় দফতরে ফোনে ব্যস্ত শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র।
এ এক অন্য শুভেন্দু।
মন্ত্রীর গাড়ির হুটার নেই। নিরাপত্তা রক্ষীদের খবরদারি নেই। হলদিয়ার শালুকখালি, হোড়খালি, চৈতন্যপুর যেখানেই এ দিন কালো স্করপিও থেকে নেমেছেন মন্ত্রী, মুহূর্তে জমেছে ভিড়। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ বা চা খেতে বলেছেন। হাসিমুখে সব আবদারই মেটালেন তিনি। তিনি মানে জেলায় তৃণমূলের কাণ্ডারি শুভেন্দু অধিকারী।
ভ্যানচালক, টোটোচালক ও তরুণীরা ঘিরে ধরলে খোশ মেজাজে কথা বলছেন। নিরাপত্তা রক্ষীরা ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে না কাউকে। চাপমুক্ত শুভেন্দুকে দেখে হলদিয়ার এক তৃণমূল নেতা বললেন, ‘‘দাদাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে জেলায় দল মজবুতই আছে। অধিকারী সাম্রাজ্যর একটি ইটও খসেনি।’’ সকাল থেকে হলদিয়া, মহিষাদল চষে বেড়ালেন। দুপুর নাগাদ ফিরলেন হলদিয়া ভবনে। বেশ কিছুটা সময় কাটালেন ভাই দিবেন্দ্যুর এমপি অফিসে। এক সময় এই অফিসে বসেই রাজ্যপাট সামলাতেন শুভেন্দু। এমপি হওয়ার পর দুর্গাচকের এই অফিস এখন দিবেন্দ্যুর কার্যালয়।
নির্বাচনে না থেকেও তিনি ভীষণভাবেই আছেন এই নির্বাচনে। ঘরজুড়ে বিবেকানন্দর ছবি আর প্রিয় রজনীগন্ধার ফুল রাখা টেবিলে। চোখ টিভির পর্দায়। ঘন ঘন বেজে চলেছে টেবিলে রাখা একাধিক মোবাইল ফোন এবং ল্যান্ড ফোন। কখনও খবর আসছে ময়নার বাকচা থেকে তো কখনও খেজুরি, সুতাহাটা থেকে। একাই সামাল দিচ্ছেন সব। নানা নির্দেশ দিচ্ছেন। নোটবুক না খুলেই নম্বর ডায়াল করে কথা বললেন সব ব্লকে। বললেন, ‘‘রাতভর ঘুমোইনি। আমার সব বুথেই এজেন্ট আছে। সবাইকে চাঙ্গা করেছি।’’ নিজেই হলদিয়ার ভোটার। ভোট দিয়েই এ দিন সোজা চলে আসেন নিজের ‘ওয়ার রুমে’ এমপি অফিসে। জানান, এই রোদে নির্বাচন কমিশনের ভোট করা উচিত নয়। দেখবেন ১২টা থেকে ৩টে বুথ ফাঁকা থাকবে। তিনটের পর ফের মানুষ বুথমুখী হবেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে এ দিন হলদিয়ায় একাধিক বুথ দখলের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ শিল্পাঞ্চলের সিংহভাগ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখা যায়নি। যে সব বুথে দেখা গিয়েছে সেই সব বুথে ভাল ফলের আশা করছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা কমিটির নেতা অচিন্ত্য শাসমল জানান, হলদিয়ায অবাধে ছাপ্পা ভোট হয়েছে। কংগ্রেস নেতা সুদর্শন মান্না বলেন, ‘‘আমাদের এজেন্টদের মেরে বার করে দেওয়া হয়েছে।’’ বিজেপির তরফে সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বিজলীর অভিযোগ, ‘‘শাসক দল ও পুলিশ দলের কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখিয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায় এজেন্ট দিতে পারিনি।’’ মহকুমা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে সব অভিযোগ করা হয়েছিল সবগুলিই খতিয়ে দেখা হয়েছে। ভিডিও করে কমিশনকে পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের সারবত্তা ছিল না।
এ সব নিয়ে কী বলছেন শুভেন্দু!
তৃণমূলের কাণ্ডারির কথায়, ‘‘উন্নয়ন আর মানুষের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ আর ভোট মেশিনারি—এই তিনেই জয় নিশ্চিত আমাদের। ভোট আসলে ‘ফাইন আর্ট’।’’