general-election-2019-west-bengal

বর্তমান, ভবিষ্যৎ ভুলে ভোট কি এ বার ‘ভূতের’

ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার টেনে আনছেন জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গাঁধী এবং রাজীব গাঁধীকে।

Advertisement

সুজিষ্ণু মাহাতো

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০১:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বর্তমান আছে। ভবিষ্যৎ আছে। অনেকেই বলছেন, ভোটে আছে ‘ভূত’ও!

Advertisement

‘ভূত’, অর্থাৎ অতীত। এ বারের ভোটের ভাষ্যে বারবার চোখে পড়ছে অতীতের আনাগোনা। সেই অতীতের উল্লেখের মধ্যে যেমন রয়েছে বাস্তব ইতিহাসের কথা, তেমনই রয়েছে কাল্পনিক মহাকাব্যের অনুষঙ্গও। শাসক-বিরোধী কোনও পক্ষই বাদ পড়ছে না এই অতীতচারণ থেকে।

ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার টেনে আনছেন জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গাঁধী এবং রাজীব গাঁধীকে। আবার মোদীর রাজীবকে ‘ভ্রষ্টাচারী’ কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে কংগ্রেসেরও অন্যতম অস্ত্রও অতীত। তাঁরা মোদীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথা। অটল নিজে বইয়ে লিখেছিলেন, ‘‘রাজীব গাঁধীর জন্যই আমি বেঁচে আছি। আমার কিডনির অসুখ জেনে উনি আমাকে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান, যাতে নিউ ইয়র্কে চিকিৎসা হয়।’’ পাল্টা আক্রমণে কংগ্রেস উল্লেখ করছে বীর সাভারকর, নাথুরাম গডসের প্রসঙ্গ। এ বারের ভোটে যে এমন পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে তা আগে থেকেই আঁচ করতে পারা যাচ্ছিল বলে জানালেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। তিনি বলেন, ‘‘‌‌বছরখানেক আগেই লিখেছিলাম, এ বার এমন হতে যাচ্ছে। অচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। তাই মোদীর প্রচারের সহজ উপায়, এ বার অতীতের কথা তুলে কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করা।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ জড়িয়ে থাকায় মোদীর পক্ষে এই কাজ আরও সহজ হয়েছে বলে মত রামচন্দ্রের। তিনি বলছেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি যদি গাঁধী-নেহরু পরিবারের বদলে অন্য অন্য কোনও সাধারণ পরিবার থেকে হতেন, তাহলে মোদী এমন করতে পারতেন না। রাহুলের পদবি গাঁধী বলেই অতীত টেনে সমালোচনা করা সহজ হয়েছে মোদীর পক্ষে।’’ রামচন্দ্র জানাচ্ছেন, তাই রাহুল মোদীর ডোকলাম নীতির সমালোচনা করলে মোদী ১৯৬২-র যুদ্ধে নেহরুর ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন। মোদী সরকারের সময়ে বাকস্বাধীনতা খর্বের অভিযোগ উঠলে মোদী ইন্দিরা গাঁধীর সময়ের জরুরি অবস্থার কথা বলেন। এই সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কথা উঠলে রাজীব গাঁধী সরকারের সময়ে শাহবানু রায়ের বিরোধিতার কথা বলেন সরকারপক্ষের নেতারা।

রাজনৈতিক নেতারা তো বটেই, অতীতচারণে উপস্থিত ইতিহাসের চরিত্রেরাও। মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে কাশী-বিশ্বনাথ করিডর গড়তে গিয়ে মন্দির ভাঙার অভিযোগ তুলে মোদীকে ‘আধুনিক যুগের ঔরঙ্গজেব’ বলেছেন কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপম। এর আগে অবশ্য রাহুল গাঁধীকে ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন রাজস্থানের বিজেপি নেতা জ্ঞান দেব আহুজা। অখিলেশ যাদবকেও ‘ঔরঙ্গজেব’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, বাবাকে ‘সরিয়ে’ ক্ষমতা দখল করায়। কংগ্রেসকে বিজেপি যেমন তুলনা করেছে চেঙ্গিস খানের সন্তানের সঙ্গে, কংগ্রেসও বিজেপিকে পাল্টা দিয়েছে মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গে তুলনা করে।

এসেছে মহাকাব্যও। রাম তো বিজেপির অস্ত্র ছিল বরাবরই, এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহাভারত। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি মোদী-অমিত শাহকে দুর্যোধন ও দুঃশাসন বলেছেন। বাবাকে আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে মোদীকে ‘দুর্যোধন’ বলেছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ মহাভারতের উল্লেখেই আক্রমণ ফিরিয়ে বলেছেন, ‘২৩ মে বোঝা যাবে কে পাণ্ডব আর কে কৌরব! এমন কাল্পনিক চরিত্রের উল্লেখের প্রবণতা এ বার নতুন, জানাচ্ছেন রামচন্দ্র।

আর সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক অভিজিৎ মিত্রের মত, ‘‘অতীত আসলে মুখ বাঁচানোর অস্ত্র। কারণ, কোনও প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণ করা এবং যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা পূরণ হয়েছে কি না, সেই জবাবদিহি করা, দুইয়ের মধ্যেই দায়িত্ববোধ জড়িয়ে রয়েছে। অতীতের উল্লেখে তা নেই। তাই অতীতের তুলনা অনেক সহজ উপায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement