কৃষ্ণনগরে এসএফআই সমর্থকদের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।
একই সুর, একই ছাঁদ, শুধু কথাগুলো যাচ্ছে পাল্টে।
তৃণমূলের মিছিল থেকে ধ্বনি উঠছে— ‘‘এই বিজেপি আর না...’’ পাশ থেকে বহু কণ্ঠ হাততালি দিয়ে দোহার দিচ্ছে ‘‘আর না, আর না!’’
বিজেপির মিছিলে সেই স্লোগানই চেহারা বদলে হয়ে যাচ্ছে— ‘‘এই তৃণমূল আর না’’। আর বামফ্রন্টের মিছিলে এসএফআইয়ের তরুণ মুখ গলা তুলছে— ‘‘এই বিজেপি, এই তৃণমূল আর না!’’
এ বারের ভোট বাজারে তুণমূল হিট এই ‘‘আর না, আর না’’— ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল অনেক আগেই, ঘুরছে সবার মুখে-মুখে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই তো সে দিন, চাপড়ার রাস্তায় যখন কৃষ্ণনগর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র হলুদ গাঁদায় মোড়া হুডখোলা জিপে রোড-শো করছিলেন, পিছন থেকে ভেসে আসছিল— ‘‘অচ্ছে দিনের এ কী মজা, চাকরি এখন পাঁপড়ভাজা, এই বিজেপি আর না...’’ আর একপাল ছেলে বুড়ো ‘‘আর না, আর না’’ ধুয়ো তুলে এক রাশ ধুলো উড়িয়ে ছুটছিলেন গাড়ির পিছু-পিছু। বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের রোড-শোয় আবার লাইনটা বদলে গিয়ে হচ্ছে— ‘‘রোজই শুনি নতুন ঢপ, শিল্প এখন আলুর চপ, এই তৃণমূল আর না, আর না...’’।
আরও পড়ুন: বাংলাই এ বার দিল্লি গড়বে, মাথাভাঙার জনসভা থেকে ডাক মমতার
বাম শিবির আবার সিরিয়াস ঢঙে কথা দিচ্ছে পাল্টে— ‘‘মরছে দলিত, মরছে চাষা, এই কি মোদীর ভালবাসা?’’ বা ‘‘চাষির ছেলে থাকবে চাষা, এই কি দিদির ভালবাসা?’’ সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝায়ের প্রচারে স্লোগান বলছে— ‘‘সিঙ্গুর থেকে শালবনি, খেতমজুরের কান্না শুনি, এই তৃণমূল আর না...’’ বা ‘‘এই বিজেপির অনেক গুণ, ধর্মের নামে মানুষ খুন, এই বিজেপি আর না...’’।
মুখে-মুখে ফেরা এই স্লোগানের উৎস কোথায়?
এসএফআইয়ের কৃষ্ণনগর শহর ইউনিট সম্পাদক সমরজিৎ রায়ের দাবি, ‘‘গত নভেম্বরে সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পর্যন্ত বামপন্থীদের যে কৃষক লং মার্চ হয়েছিল সেখানেই রিয়া মাইতি নামে এক এসএফআই সমর্থক প্রথম এই স্লোগান তুলেছিলেন। সেই ভিডিয়ো হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়েছিল। অন্যেরা এখন তাতে নিজেদের মতো কথা বসিয়ে প্রচারে ব্যবহার করছেন।’’
আরও পড়ুন: উর্দিতে গুন্ডাগিরি বুঝতে পারিনি, ক্ষমা চাইলেন পার্থ
বিজেপি ইতিমধ্যেই গায়ক সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে দিয়ে ওই গান গাইয়ে ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিয়েছে ফোন থেকে ফোনে, ল্যাপটপ থেকে ডেস্কটপের পর্দায়। দলের কৃষ্ণনগর উত্তরের প্রচার সচিব সন্দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয়ের গান শুনেই আমরা আমাদের মিছিলে গাইছি। শুনে পাবলিক খুব মজা পাচ্ছে।’’
তৃণমূল আবার দাবি করছে, দলের মধ্যে থেকেই তারা ওই গান পেয়েছে। সদ্যপ্রাক্তন জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি অয়ন দত্তের কথায়, ‘‘দলের সোশ্যাল ইউনিট থেকেই এই গানটা পেয়েছি। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়। মোদী সরকারের পাঁচ বছরের ব্যর্থতার কথা সহজে ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে।’’
চায়ের দোকান থেকে পাড়ার ঠেক, আমজনতা অবিশ্যি দেখেশুনে মুচকি হাসছে। কৃষ্ণনগর শহরের এক চেনা আড্ডাধারীর কথায়— ‘‘সবই তো এক মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ। ওরা খাওয়াচ্ছে, আমরা খাচ্ছি। আর ভাবছি —আর না, আর না।’’
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেবাংলায় খবরপেতে চোখ রাখুন আমাদেররাজ্যবিভাগে।)