ভোটের গণযজ্ঞে পরিবেশ ব্রাত্যই

আম-নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মীরাও বলছেন, নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে সন্ত্রাস, ধর্ম বা জাতিবিদ্বেষ রাজনৈতিক দলগুলির কাছে যতটা গুরুত্ব পায়, পরিবেশ তার সিকিভাগও পায় না!

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৯
Share:

ভোট যতটা মানুষের জন্য, পরিবেশ কি তার চেয়ে কিছু কম? প্রশ্নটা উঠছে দেশজোড়া নির্বাচনে পরিবেশকে উপেক্ষা-অবহেলা করার বহর দেখে।

Advertisement

‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর) নামে একটি পর্যবেক্ষণ সংগঠনের সমীক্ষা জানাচ্ছে, ভোটারদের কাছে পরিবেশ এবং দূষণের গুরুত্ব আছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের প্রার্থীদের কাছে পরিবেশের গুরুত্ব নেই! আম-নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মীরাও বলছেন, নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে সন্ত্রাস, ধর্ম বা জাতিবিদ্বেষ রাজনৈতিক দলগুলির কাছে যতটা গুরুত্ব পায়, পরিবেশ তার সিকিভাগও পায় না!

অন্যান্য বিষয় ও প্রসঙ্গের ভিড়ে পরিবেশ যে এখনও অনেকটাই গুরুত্বহীন, তা মেনে নিচ্ছেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও। বাম শিবিরের কাছেও পরিবেশ তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ। এডিআরের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য তথা আইআইএম-আমদাবাদের প্রাক্তন অধ্যাপক জগদীপ ছোকার বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলি ভোটে নিজেদের বিষয় তুলে ধরে, আম-আদমির বিষয় নয়।’’ এডিআরের নির্বাচনী সমীক্ষা বলছে, গোটা দেশে সামগ্রিক ভাবে জল, বায়ু, নদীর দূষণকে ভোটের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেন প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ।

Advertisement

২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে গঙ্গাদূষণ রোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। সরকার গঠনের পরে ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্প এবং তার জন্য পৃথক মন্ত্রকও গড়া হয়। কিন্তু গঙ্গার কলুষ গত পাঁচ বছরে কতটা দূর হয়েছে, প্রশ্ন তুলেছে খোদ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টই।

পরিবেশকর্মীরা জানান, এ রাজ্যেও বায়ু ও জলের দূষণ, আর্সেনিক সমস্যা জনজীবনকে প্রভাবিত করলেও বিরোধীদের প্রচারে তা ঠাঁই পায় না। এক পরিবেশকর্মী বলেন, ‘‘পরিবেশও যে মানবাধিকারের অঙ্গ, রাজনীতিবিদেরা এখনও তা উপলব্ধি করতে পারছেন না।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত মনে করেন, গঙ্গাদূষণকে বিরোধী শিবির যথাযথ ভাবে
আক্রমণের হাতিয়ার করছে না। তাঁর তির্যক উক্তি, ‘‘ভোটের পরীক্ষায় পরিবেশ তো ঐচ্ছিক বিষয়!’’

বর্তমান সময়ে পরিবেশ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা মেনে নিয়েও সিপিএম নেতা রবীন দেব বলছেন, ‘‘বেশির ভাগ ভোটারের কাছে আর্থ-সামাজিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকলে বাকি সমস্যাগুলিরও সমাধান হবে।’’

প্রভাবের খতিয়ান
গোটা দেশে
• প্রায় ১২% ভোটার জল ও বায়ু দূষণকে অগ্রাধিকার দেন।
• ১২% ভোটার অগ্রাধিকার দেন নদী, হ্রদ দূষণকে।
• ১১% ভোটার শব্দদূষণকে অগ্রাধিকার দেন।
গ্রামে
• ১৮% শতাংশ ভোটার জলদূষণকে অগ্রাধিকার দেন।
শহরে
• প্রায় ৩৪% ভোটার অগ্রাধিকার দেন জল ও বায়ুর দূষণকে।
সূত্র: এডিআর

এডিআরের রিপোর্ট বলছে, শহরাঞ্চলে প্রায় ৩৪% ভোটারের কাছে জল ও বায়ুর দূষণ অগ্রাধিকার পায়। গ্রামাঞ্চলে নদী ও সরোবর দূষণ অগ্রাধিকার পেয়েছে প্রায় ১৮% ভোটারের কাছে। ‘‘অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি পরিবেশ এখনও সে-ভাবে প্রচারের আলো পায়নি। তবে শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে ভোটের প্রচারে পরিবেশ দূষণ রোধের প্রতিশ্রুতি
কিছুটা হলেও গুরুত্ব পায়,’’ বলছেন পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দুবাবু।

রাজ্যের পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্তের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলির পরিবেশ নিয়ে কার্যত কোনও পরিকল্পনা নেই। কোনও কোনও দলের ইস্তাহারে প্লাস্টিক দূষণ, জলবায়ু বদলের মতো বিষয়ে দু’-চার লাইন উল্লেখ করা হয় ঠিকই। কিন্তু সে-সবের বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না। ‘‘কোনও দলকেই পরিবেশের বিষয়ে সক্রিয় হতে দেখা যায় না। লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভায় পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে কতটুকু আলোচনা হয়,’’ প্রশ্ন তুলছেন নববাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement