প্রতীকী ছবি।
জল্পনা উস্কেও থমকে গেলেন ৩ বিধায়ক। বিজেপিতে যোগদানের কোনও সম্ভাবনাই নেই, জানালেন নেপাল মাহাত এবং সুনীল সিংহ। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকা বৈঠকে বৃহস্পতিবার হাজির হলেন না অর্জুন সিংহের খাসতালুক ভাটপাড়ার ডজনখানেকেরও বেশি কাউন্সিলর। অর্জুন অনুগামীরা যে বৈঠকে যোগ দেননি, জ্যোতিপ্রিয় তা স্বীকার করেছেন। তবে জানিয়েছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরই দলের সঙ্গে রয়েছেন, পুরসভা অর্জুনের হাতছাড়া হচ্ছেই।
ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ এ দিন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই নেপাল মাহাত, সুদীপ মুখোপাধ্যায় ও সুনীল সিংহকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি পদে রয়েছেন নেপাল। তিনি বিধানসভায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের উপনেতা পদেও রয়েছেন। পুরুলিয়ার পূর্বতন ঝালদা তথা বর্তমানের বাঘমুন্ডি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে টানা চার বার জিতেছেন তিনি। কংগ্রেসের এ হেন হেভিওয়েট নাম বিজেপিতে চলে গেলে বিষয়টা মোটেই স্বস্তির হত না সোমেন মিত্রের পক্ষে। বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় নেপাল মাহাতর বৈঠক হয়ে গিয়েছে, বৃহস্পতিবারই তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, পুরুলিয়া থেকে তিনি বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন— এই সব গুঞ্জনই রক্তচাপ বাড়াতে শুরু করেছিল কংগ্রেস নেতৃত্বের। অবশেষে এ দিন বিকেল নাগাদ প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেন নেপাল। তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন না এবং তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া জল্পনার কোনও ভিত্তি নেই— বিবৃতিতে এমনই দাবি করেন নেপাল।
গেরুয়া শিবিরের একটি অংশ জানাচ্ছে, নেপাল মাহাতর সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু নেপালের সব শর্ত মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি দল বদলাতে রাজি হননি। আর নেপাল দল বদলাননি বলেই পুরুলিয়া সদরের কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও আর সে পথে হাঁটেননি। নেপালের বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সুদীপকে নিয়েও গুঞ্জন ছিল।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামা নিয়ে মমতার মন্তব্যের পরই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত, বিজেপিতে যোগ দিয়ে বললেন অর্জুন
উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা গারুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল সিংহও যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটাতে চেয়েছেন বৃহস্পতিবার বিকেলে। এ দিন সকালেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন দীর্ঘ দিনের যে বিধায়ক, সেই অর্জুন সিংহের ভগ্নীপতি এই সুনীল। অর্জুনের দৌলতেই গারুলিয়ার চেয়ারম্যান পদে বসেছিলেন সুনীল। কংগ্রেস বিধায়ক মধুসূদন ঘোষের প্রয়াণের পরে নোয়াপাড়ার উপনির্বাচনে ওই কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মঞ্জু বসুকে টিকিট না দিয়ে সুনীলকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্তও তৃণমূলকে নিতে হয়েছিল অর্জুনের দাপটেই। তাই অর্জুন সিংহ দলবদল করলে সুনীলও সঙ্গে যাবেন— এমনটা ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। সুনীলের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের কথা হয়েছে বলেও মুরলীধর সেন লেন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে সুনীল বলেন, ‘‘আমি দলেই আছি। বিজেপিতে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটে আইনশৃঙ্খলা মোকাবিলায় কি ‘লাঠিধারী’ হোমগার্ড? তীব্র আপত্তি বিরোধীদের
বিধায়ক স্বস্তি দিলেও, ভাটপাড়ার তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনেকেই কিন্তু অর্জুনের সঙ্গে রয়েছেন বলে খবর। অর্জুন সিংহ শুধু বিধায়ক নন, ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যানও। তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় আর কালক্ষেপ না করে চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে অপসারণের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়র ডাকা বৈঠকে বৃহস্পতিবার ভাটপাড়ার সব কাউন্সিলর যোগ দেননি।
জ্যোতিপ্রিয় অবশ্য জানিয়েছেন, অর্জুন অনুগামীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নন ভাটপাড়া পুরসভায়। তিনি বলেন, ‘‘৩৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৩৩ জন তৃণমূলের, ২ জন কংগ্রেসের। ৩৩ জনের মধ্যে ১৯ জনই আজ বৈঠকে এসেছিলেন। ১৪ জন আসেননি। তবে ওই ১৪ জনের মধ্যে ৫ জন কোথাও যাচ্ছেন না। তাঁরা ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। ৯ জন অর্জুনের সঙ্গে যাচ্ছেন। ফলে বোর্ডে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অক্ষুণ্ণ থাকছে।’’
অর্জুন দল ছাড়ায় তৃণমূলের লাভই হয়েছে বলেও জ্যোতিপ্রিয় এ দিন দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একটুও বিচলিত নই। উনি বিজেপিতে যাওয়ায় অনেকেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। সব দিকে খাবলা-খাবলি করতেন উনি। এ বার তার থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।’’