আসানসোলের বুথে মুনমুন সেন। ছবি: সুমন বল্লভ
ঘড়ি ধরে তখন সোমবার দুপুর ১১টা বেজে ২ মিনিট। সকাল ৭টায় শুরু হওয়া চতুর্থ দফার ভোট-পর্ব ঘিরে ততক্ষণে বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়ক লাগোয়া তাঁর আস্তানার সিঁড়ি দিয়ে নেমে তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন বললেন, “কোথায় ঝামেলা? আমায় তো কেউ কিছু বলেনি। আমি ব্রেকফাস্ট করছিলাম।” আসানসোল লোকসভায় তাঁর অন্যতম প্রতিপক্ষ বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়ের নাম করে প্রশ্ন তুলতেই সুচিত্রাকন্যার উত্তর, “ওই নামটা শুনতে চাই না। যাঁরা ইচ্ছে করে গোলমাল করেন, তাঁদের নিয়ে কোনও কথা নয়।”
লাল টিপ, পোলকা ডটের শাড়ি পরা তারকাপ্রার্থীকে নিয়ে তাঁর সাদা এসইউভি ছুটল কুলটির দিকে। হাতেগোণা চারটি বুথে তিনি গাড়ি থেকে নামলেন। ঘুরে দেখলেন বুথ। কথা বললেন ভোটারদের সঙ্গে। ফের গাড়িতে উঠে এগিয়ে গেলেন।
প্রার্থী হিসেবে ভোটগ্রহণের দিন তাঁর প্রতিপক্ষেরা যখন অনেক আগে থেকে এলাকা প্রায় চষে ফেলেছেন তখন তিনি মাঠে নামলেন অনেক পরে। ভরসা কীসের? আসানসোল কেন্দ্রে মুনমুন কি কাঙ্ক্ষিত জয় এনে দিতে পারবেন? প্রশ্নটা উড়িয়ে দিয়ে আসানসোলের মেয়র তৃণমূলের জিতেন্দ্র তিওয়ারি বললেন, “মুনমুনদি তারকা। তারকার ক্যারিশমার সঙ্গে জুড়েছে আমাদের সংগঠন। অকারণ চিন্তায় থাকতে যাব কেন? জিতব আমরাই।” বুথ সফরের মাঝে মুনমুনও বললেন, “অকারণ তাড়াহুড়ো করে লাভ কি! এতদিনের প্রচারে ম্যাচ তো ‘সেট’ হয়েই আছে। ভোটটা শান্তিপূর্ণ ভাবে হলেই হয়।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তারকার ‘ক্যারিশমা! মালুম হয় নিয়ামতপুরের এক বুথে। গাড়ি থামিয়ে হাত নাড়তে থাকা মুনমুনকে দেখে, মাথায় সাদা টুপি, ধুতি-লুঙ্গি পরা এক বৃদ্ধ অনুরোধ করেন, “দিদি, আমাদের ভোট দিতে অসুবিধা হচ্ছে। একবার দেখে যান।” তারকা গাড়ি থেকে নামলেন। ধুলো উড়িয়ে তাঁর সঙ্গী হল জনাপঞ্চাশের ভিড়। কখনও নিরাপত্তারক্ষী, কখনও দলীয় কর্মীদের হাত ধরে বুথ অবধি পৌঁছলেন মুনমুন। তবে ফেরার পথে ধুলোর চোটে নাকে রুমাল চাপা দিতে হল তাঁকে। সেই বুথ ঘুরে মধ্যাহ্নভোজন সারতে ফের জাতীয় সড়ক লাগোয়া আস্তানায় ফিরে মুনমুন প্রথমেই বললেন, “উফ্, এখানে যা পলিউশন (দূষণ)। আমি প্রথম পলিউশন কমানোর কাজ করব।’’
মধ্যাহ্নভোজের পরে ফের এলাকা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন মুনমুন। গিয়েছিলেন রানিগঞ্জের দিকে। দুপুর সাড়ে ৩টে থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্তবিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার খবর এলেও, তার কোনওটি তীব্রতায় বারাবনিতে বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের সমকক্ষ নয়। ফিরে এসে চোখে-মুখে এমন একটা ভাব যেন বাজিমাত করে ফেলেছেন। মুনমুন মুখেবললেন, “দুর্গাপুজোর দশমীর মতো লাগছে। আজ সব শেষ। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
সকাল থেকে লোকসভা এলাকা চষে বেড়ানো বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কে বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ দেখা গিয়েছে আসানসোল গার্লস কলেজের বুথের সামনে। তিনি গিয়েছিলেন সেখানে ‘ছাপ্পা ভোট’ দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ পেয়ে। তৃণমূল অবশ্য সে অভিযোগ মানেনি। কিছু ক্ষণ থাকার পরে, বিজেপি প্রার্থীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘অনেক হয়েছে। এ বার বাড়ি যাই।’’