বাড়িতে গোলমাল। বড় ভাই ‘ঘরছাড়া’ করেছেন ছোট ভাইকে। ছোট ভাই দ্বারস্থ হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের! অভিযোগ দায়ের করেছেন কমিশনের ‘সি-ভিজিল’ অ্যাপে।
অভিযোগ দেখে কমিশনের কর্তারা তো বিস্মিত। পারিবারিক কোন্দলে তাঁদের কী করার আছে! ছোট ভাইয়ের যুক্তি, আছে বই কী। বাড়িতে না থাকতে পারলে তিনি ভোট দেবেন কী করে? তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করার দায় তো কমিশনেরই!
মূলত নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ শুনতেই এ বারের ভোটে ‘সি-ভিজিল’ অ্যাপ চালু করেছে কমিশন। অভিযোগের সমর্থনে ছবি বা ভিডিয়ো-ও পাঠানো যাচ্ছে ওই অ্যাপে। কমিশন সূত্রের খবর, অনেকে নিজস্বী তুলে পাঠিয়ে দিয়েছেন অ্যাপে। কেউ আবার পাঠিয়েছেন চেয়ার-টেবিলের ছবি।
অভিযোগ জানানোর অ্যাপ হোক বা সাহায্যের জন্য চালু করা ‘হেল্প লাইন’— পুলিশ থেকে দমকল এমন হ্যাপা পোহাতে হয় সকলকেই। মাঝ রাতে কেউ পুলিশকে ফোন করে বলেন দুরন্ত ছেলেকে একটু বকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কেউ আবার ‘মনের আগুন’ নিভিয়ে দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন দমকলকে।
কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিষয়গুলি কাটছাঁট করেই ‘সি-ভিজিল’-এ দায়ের হওয়া অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা। তাঁদের এক জনের বক্তব্য, , ‘‘ভোট পর্বে অনেকে ভাবেন সব কিছুর সমাধান কমিশনের কাছে পাওয়া যাবে। তাই পারিবারিক কারণে গোলমাল হলেও তা সি-ভিজিলে পাঠিয়েছেন কেউ কেউ!’’ কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, অ্যাপ চালু হওয়ার সময়েই ভোটের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিষয় জমা পড়ার সংখ্যা বেশি ছিল। যত দিন যাচ্ছে সেই সংখ্যা ক্রমশ কমছে।
আরও পড়ুন: প্রথম দফার তালিকাতে অসন্তুষ্ট কর্মীরা, ক্ষোভের মুখে জেরবার রাজ্য বিজেপি
আরও পড়ুন: ইয়েড্ডির ডায়েরিতে উঠল ঝড়, অমিত বললেন জালিয়াতিতে নেমেছে কংগ্রেস
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোটের দিন ঘোষণার এক দিন পর থেকে এ রাজ্যে চালু হয়েছে ‘সি ভিজিল’। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অভিযোগ জমা পড়েছে ১৪২৭টি। তার মধ্যে ৫৩১টিরই কোনও সারবত্তা নেই। ৮৮৮টি অভিযোগের বিষয়ে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর।
তালিকার শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে ১৪২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার পরেই নদিয়া। অভিযোগের সংখ্যা ১৪০। ১৩৪টি অভিযোগ নিয়ে তৃতীয় স্থানে বীরভূম। ১১৫টি অভিযোগ নিয়ে চারে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পাঁচে হুগলি। মালদহে ৮টি এবং দক্ষিণ দিনাজপুর ৭টি অভিযোগ ‘সি-ভিজিল’-এ নথিভুক্ত হয়েছে। সব থেকে কম অভিযোগ জমা পড়েছে কালিম্পঙে। মাত্র একটি। বেশির ভাগ অভিযোগই নেতা-মন্ত্রীদের হোর্ডিং ব্যানার না-খোলা ও দেওয়াল লিখনের বিষয়ে।
অ্যাপে অভিযোগ নথিভুক্তির সংখ্যায় হেরফেরের পিছনে ঠিকঠাক মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকা না-থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন কমিশনের কর্তারা। পাশাপাশি জেলার আয়তনও অভিযোগ কম-বেশি হওয়ার কারণ বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।