বিজেপির ‘দেশপ্রেমে’ আরএসএস-কাঁটা ফোটালেন মমতা

বুধবার কালীঘাটের বাড়িতে দলীয় ইস্তাহার প্রকাশ করেন তৃণমূলনেত্রী। সেখানে সরাসরি বিজেপি এবং সঙ্ঘের ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০১:২৬
Share:

পুলওয়ামা-কাণ্ড এবং বালাকোট অভিযানের পরে দেশ জুড়ে বিজেপির তোলা ‘দেশপ্রেম’এর আবেগ মোকাবিলায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার আরএসএস-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তাঁর বক্তব্য, ‘যে বিজেপি আজ দেশে দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট বিলি করছে, সেই বিজেপির পিতৃসংগঠনের ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ভূমিকা ছিল তা ন্যক্কারজনক।’

Advertisement

বুধবার কালীঘাটের বাড়িতে দলীয় ইস্তাহার প্রকাশ করেন তৃণমূলনেত্রী। সেখানে সরাসরি বিজেপি এবং সঙ্ঘের ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বস্তুত, তৃণমূলের ইস্তাহারে নাম না করে আরএসএস সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার সঙ্গে মিলে যায় দেশের এক বড় অংশের ইতিহাসবিদদের মতামত। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর লবন সত্যাগ্রহ থেকে শুরু করে ভারত ছাড়ো আন্দোলন— সঙ্ঘ কোনও আন্দোলনেই সরাসরি যোগ দেয়নি। ইতিহাসবিদদের বক্তব্য, ব্রিটিশ সরকারের নথি এবং সঙ্ঘ নেতৃত্বের বিভিন্ন লেখা থেকেই স্পষ্ট, কী ভাবে কর্মীদের সমস্ত আন্দোলন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ সরকারকে মুচলেকা দিয়ে বীর সভারকরের আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রসঙ্গও বহু আলোচিত। আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা কে বি হেডগেওয়ার ছিলেন সভারকর ভক্ত। ইতিহাসবিদদের অনেকরই বক্তব্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সঙ্ঘের আচরণ ‘সদর্থক’ ছিল না। জাতীয় পতাকা নিয়ে তাদের সমালোচনা ‘ন্যক্কারজনক’ বলেই মনে করেন অনেকে। সমালোচনা আছে তাদের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার ভাবনা নিয়েও।

যদিও রাজ্যের আরএসএস নেতা জিষ্ণু বসুর পাল্টা যুক্তি, ‘‘ওঁরা ইতিহাস জানেন না। পড়েনওনি। আরএসএসের প্রতিজ্ঞা নেওয়ার সময় স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করার কথা বলা হত। রামভাও রুইকরকে সঙ্গে নিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু হেডগেওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।’’

Advertisement

এ দিন তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারে মোদী সরকারের ‘গণতন্ত্রবিরোধী’ ভাবমূর্তির কথাও একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। হীরক রাজার সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনা করে বলা হয়েছে, ‘হীরক রাজার দেশে আমরা দেখেছি সেখানে প্রশ্ন করার অধিকারই থাকে না প্রজাদের। নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেও আমরা দেখতে পাচ্ছি সেই হীরক রাজার দেশের ছায়া নেমেছে এই ভারতে।’ একই সঙ্গে মানবাধিকার-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অধিকার কী ভাবে বিপন্ন হচ্ছে, সে কথাও তুলে ধরা হয়েছে ইস্তাহারে। পাশাপাশি সংখ্যালঘু, দলিতদের উপর আক্রমণ এবং হত্যার প্রসঙ্গও তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এর আগেও মোদী সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মমতা বলেছেন, ভারত বৈচিত্র্যের দেশ। শাসনের ক্ষেত্রেও সেই বৈচিত্র্য মাথায় রাখা দরকার। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সেই বৈচিত্র্যকেই অস্বীকার করছে। রাজ্যের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডে দেশের প্রধান আঞ্চলিক দলগুলিকে হাজির করে মুখ্যমন্ত্রী একটি বার্তা দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। ইস্তাহারেও তার ছাপ স্পষ্ট। ঘটনাচক্রে পুস্তিকার শেষে যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে ব্রিগেডে আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে।

এ দিন কাশ্মীর প্রসঙ্গেও নিজের মতামত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্ভব। শান্তি ফেরানো সম্ভব। আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি গিয়ে কিছু দিন থাকতেও রাজি আছি ওখানে।’’ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু অবশ্য এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আগে উনি রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরান। একটা মিছিল করেছিলাম বলে আমাদের সকলকে আজ ব্যাঙ্কশাল আদালতে এসে জামিন নিতে হল। আগে রাজ্য সামলান। তারপর কাশ্মীর ভাববেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement