—ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি সকালেই টুইট করেছিলেন— ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির।’
দুপুরে রাজ্যে নির্বাচনী সভা করতে এসে রবি ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়ে সেই একই পঙ্ক্তিই ব্যবহার করলেন উনি। অবশ্য হিন্দিতে, ভাবানুবাদ।
ব্যস ওই টুকুই। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংক্ষিপ্ত মিল কেবল এতটুকুই। বাকি সময়টায় যুযুধান দু’পক্ষ পারস্পরিক নারদ-নারদেও ব্যবহার করলেন রবীন্দ্রনাথকে। এক দিকে পুরুলিয়ার সভায় মোদী যেমন বলেছেন, ‘‘গুরুদেব বলেছিলেন, মন ভয় মুক্ত হোক। মাথা সম্মানের সঙ্গে উঁচু থাকুক। কিন্তু কংগ্রেস, কমিউনিস্ট এবং দিদি গুরুদেবের এই শিক্ষা ভেঙেচুরে ফেলেছে।’’ তেমনই পুরুলিয়ার শিমুলিয়ার সভায় মোদীকে পাল্টা কটাক্ষ করে মমতা বলেছেন, ‘‘খুব সহজ দুটো লাইন মুখস্থ রাখা! আর তো কিছু জানো না! রবীন্দ্রনাথ কিছু পড়েছ?’’ এর পরেই রবীন্দ্রনাথের একাধিক কবিতা আবৃত্তি করে শোনান মুখ্যমন্ত্রী— ‘‘বলতে পারতে, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, অথবা বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, অথবা নাই নাই ভয় বা দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে অথবা প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে...।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় এ দিন জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে দিনটি ছিল ২৫ বৈশাখ, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। বাঁকুড়ার সভার শুরুতেই রবীন্দ্রনাথের ছবিতে ফুল দেন মোদী। রাজনৈতিক কায়দায় স্লোগান দেন, ‘গুরুদেব অমর রহে’। উপস্থিত জনতাও তাঁর সঙ্গে গলা মেলান। এর পর মোদী বাংলায় বলেন, ‘‘২৫ বৈশাখ গুরুদেবের শুভ জন্মতিথিতে প্রার্থনা করি, বাংলায় পুণ্য হোক, বাংলায় শান্তি আসুক।’’
পুরুলিয়ার সভাতেও ‘টেগোরে’র প্রসঙ্গ তোলেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন— চার বছর আগে এই পবিত্র দিনে গরিবের জীবন বদলে দেওয়ার মতো তিনটি যোজনা শুরু হয়েছিল কলকাতা থেকে— প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা যোজনা এবং অটল পেনশন যোজনা।’’
রবীন্দ্রনাথের পঙ্ক্তি ব্যবহার করে এ দিন মমতাও একাধিকবার আক্রমণ করেছেন মোদীকে। ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ আবৃত্তি করে মমতা বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ এখন বেঁচে থাকলে আবার রাখিবন্ধন করতেন। বলতেন, দাঙ্গা চাই না, শান্তি চাই। আজ বিজেপির দাঙ্গা দেখে মনে হয়, কবিগুরুকে জিজ্ঞাসা করি, তুমি কোথায়, তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা?’’ বাঁকুড়ার সভায় মমতার মন্তব্য, ‘‘এই মাটি রবীন্দ্র-নজরুলের। রবীন্দ্র-নজরুল আমাদের ঐতিহ্য। এখানে বিভাজন, হিংসা, কুৎসা— এ সবের কোনও জায়গা নেই।’’