কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী গোবিন্দ রায়। —ফাইল চিত্র
বামেদের তুরুপের তাস সেই কমল গুহ আর পঞ্চশহিদ। তাঁদের উদ্দেশ্যেই শ্রদ্ধা জানিয়েই মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন কোচবিহার লোকসভা আসনের বাম প্রার্থী গোবিন্দ রায়।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ কোচবিহার জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি জমা দেন গোবিন্দ। কিন্তু, কমল তনয় উদয়ন তো এখন তৃণমূলের বিধায়ক, তাহলে কি ভোট আসবে? গোবিন্দর জবাব, “গণ আন্দোলনের নেতা কমল গুহ। তিনি আমাদের নেতা। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েই মনোনয়ন জমা দিয়েছি। তাঁর পুত্র কি করছেন না করছেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। তাতে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই।” তৃণমূলের দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন। কমল গুহকে কেউ শ্রদ্ধা জানালে ভাল লাগে। সেই সঙ্গেই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ১৯৯৬ সালে কী হয়েছিল। তখন কমল গুহকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল? তাই এই বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।” সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, পঞ্চশহিদের কথা যারা বলছেন তাঁদের কারও নামেই ওইদিন মামলা হয়নি।
উদয়ন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কমল গুহ আর পঞ্চশহিদ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায় কোচবিহার তথা দিনহাটায়। বিশেষ করে ভোট আসলেই মিটিংয়ে-মিছিলে তাদের নাম ওঠে বারেবারে। বাম আমলে কমল গুহের গড় বলেই পরিচিত ছিল দিনহাটা। কোচবিহার জেলার একটি বড় অংশেও তাঁর প্রভাব ছিল। তিনি দলে থাকাকালীন নানা সময়ে সিপিএম, এমনকি নিজের দলেও অনেকের সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়। ১৯৯৬ সালে সমাজতান্ত্রিক ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন কমল গুহ। সেই সময় গোবিন্দ রায় তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। সেই সময় তিনি সমাজতান্ত্রিক ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে কোচবিহার আসনে লড়াই করেন। উদয়ন দলত্যাগ করার সময় কমল গুহের সঙ্গে সেই সময় কী ধরনের আচরণ সিপিএম তথা বাম সরকার করেছিল সেই অভিযোগ বার বার করেছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তোলেন তিনি। উদয়ন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক থাকার সময়েই ২০০৮ সালে আইন অমান্য আন্দোলন করতে গিয়ে দিনহাটায় মহকুশাসকের অফিসের সামনে ৫ ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীর মৃত্যু হয়। সেই থেকে পঞ্চশহিদ দিবস পালন শুরু হয়। উদয়ন দল পাল্টালেও সেই দিবস পালন করে যান।
ফরওয়ার্ড ব্লকের অবশ্য দাবি, উদয়ন শাসক দলে যোগ দেওয়ার পরে কমল গুহ বা পঞ্চশহিদের বিষয়ে কিছু বলার অধিকার হারিয়েছেন। উদয়নের অনুগামীরা অবশ্য বলেন, “মানুষ কার পক্ষে রয়েছেন সে রায় একাধিকবার দিয়েছেন। তাই ওই বিষয়ে বামেদের চুপ করে থাকাই ভাল।” এই দ্বন্দ্বকে কটাক্ষ করে বিজেপির কোচবিহারের সভানেত্রী মালতি রাভা বলেন, “ওই দুই দলই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। মানুষ বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন।”