তরুণ মন টানতে ইনস্টাগ্রাম

ফেসবুক, টুইটারে আগে থেকে থাকলেও ছবি-ভিডিয়ো শেয়ারের অ্যাপ, ইনস্টাগ্রামে অবশ্য নতুন কানহাইয়া।

Advertisement

সুজিষ্ণু মাহাতো

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৫
Share:

সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমার।

ভোট চেয়ে কানহাইয়া ছুটছেন গ্রামে। সেই ছবিরই দেখা মিলছে ইনস্টাগ্রামে।

Advertisement

কোথাও বয়স্ক মহিলাকে প্রণাম করছেন। কোথাও চলতে থাকা গানের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। বিহারের বেগুসরাইয়ে প্রচারের নানা অজ গাঁয়ের এমন ছবিই নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে নিয়মিত শেয়ার করছেন সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমার।

ফেসবুক, টুইটারে আগে থেকে থাকলেও ছবি-ভিডিয়ো শেয়ারের অ্যাপ, ইনস্টাগ্রামে অবশ্য নতুন কানহাইয়া। ৯ মার্চ তিনি ইনস্টাগ্রামে প্রথম ছবি পোস্ট করেন। মূলস্রোতের রাজনীতিতে আর এক ‘হেভিওয়েট’ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও এতদিন ছিলেন না ইনস্টাগ্রামে। পুরোদমে রাজনীতিতে আসার পর টুইটারে আসেন প্রিয়ঙ্কা। তা কয়েক মাস আগের কথা। ১২ মার্চ তিনি ইনস্টাগ্রামেও যাত্রা শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতোই ইনস্টাগ্রামও রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চ হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এমনটা ছিল না কয়েক বছর আগেও। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ শহর ছাড়িয়ে গ্রাম-মফসস্‌লে জনপ্রিয় হলেও ইনস্টাগ্রাম বরাবরই ছিল ‘শহুরে’। কারণ, ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপের মতো নানা বিষয় এখানে শেয়ার করা যায় না। এখানে কেবল শেয়ার হল ছবি ও ভিডিয়ো। সে সবের বিষয়ও ছিল তুলনায় ‘অভিজাত’। কয়েক বছর আগের সমীক্ষা অনুযায়ী, ইনস্টাগ্রামে পছন্দের বিষয় গান, বেড়ানো, ভোজন, ফোটোগ্রাফি, ফ্যাশন, খেলাধুলোর মতো বিষয়। সেখানে রাজনীতির প্রবেশ কেন? তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ সুপর্ণ মৈত্রের কথায়, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়াতে নির্দিষ্ট রুচিসম্পন্ন জনগণের কাছে নির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়। ইনস্টাগ্রাম কিছু বিশেষ লোকই ব্যবহার করেন। তা ছাড়া এখন ছবি বা ভিডিয়োর চাহিদা বাড়ায় ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করছে রাজনৈতিক দলগুলি।’’

কার ফলোয়ার কত
• বিজেপি ১০.৬ লক্ষ
• কংগ্রেস ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার
• তৃণমূল ১৩.১ হাজার
• পশ্চিমবঙ্গ সিপিএম ৯৭৯
• নরেন্দ্র মোদী ১ কোটি ৯৭ লক্ষ
• রাহুল গাঁধী ৬ লক্ষ ৩০ হাজার
• মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৯৭৩৪

সমীক্ষা বলছে, মূলত ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা ইনস্টাগ্রাম পছন্দ করেন। এঁদের অধিকাংশই শহরের বাসিন্দা, টাকা খরচ করতে ভালবাসেন। এই বয়সী অনেকেই প্রথমবারের ভোটার। তাঁদের টানতেই এই তৎপরতা বলে মনে করছেন তৎপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই তরুণ ভোটারদের টানতে ২০১৪ থেকেই তৎপর হন নরেন্দ্র মোদী। দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ারই সবচেয়ে বেশি, ১৯.৭ মিলিয়ন। দেশের প্রথম ১৫টি জনপ্রিয় ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মধ্যে রাজনীতির মুখও একমাত্র তিনিই। এই তালিকায় মোদীর উপরে রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া (৩৮.১ মিলিয়ন), দীপিকা পাড়ুকোন (৩৩.৭ মিলিয়ন), বিরাট কোহালি (৩১.৩ মিলিয়ন)-রা।

হালে ইনস্টাগ্রাম-মন পেতে সচেষ্ট সব দলই। বিজেপির দলীয় অ্যাকাউন্ট বা মোদীর অ্যাকাউন্ট তো রয়েছেই, জানুয়ারি থেকেই @গুডগভর্নেন্সবিজেপি অ্যাকাউন্টে মোদী সরকারের নানা সাফল্য প্রচার করছে বিজেপি। ছবিতে তথ্য দিয়ে জানানো হচ্ছে নানা প্রকল্পের খতিয়ান। মোদীর চেয়ে ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যায় অনেক পিছিয়ে রাহুল গাঁধী। তাঁর ফলোয়ার ৬ লক্ষ ৩০ হাজার। আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে শিবসেনা ও আপ ইনস্টাগ্রামে বেশ সক্রিয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ও তাঁর দলও রয়েছে ইনস্টাগ্রামে। ফলোয়ার তুলনায় কম হলেও ভোটের মরসুমে তৃণমূলের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকেও চলছে প্রচার। মোদী সরকারের কাজের হিসেব চেয়ে তৃণমূল সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার কর্মসূচি নিয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেব দাও’। সেই ভিডিয়োও শেয়ার করা হয়েছে ইনস্টাগ্রামে।

বঙ্গ সিপিএম ফেসবুক টুইটারে আগে থেকে থাকলেও ইনস্টাগ্রামে এসেছে বছরখানেক। দলের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা এক কর্মীর কথায়, ‘‘এখন সোশ্যাল মিডিয়ার নানা মঞ্চে একই কনটেন্ট শেয়ার করা হলেও পরে ইনস্টাগ্রামের জন্য আলাদা কনটেন্ট তৈরির ভাবনা রয়েছে।’’ কিন্তু খাওয়া-দাওয়া, ঘুরে বেড়ানোয় মজে থাকা ইনস্টাগ্রাম জনতা রাজনীতির কথা শুনবে তো? ওই কর্মীর জবাব, ‘‘একটা পরিসর যখন রয়েছে, তখন রাজনীতির কথা তো সেখানে বলতেই হবে। ব্যবহারকারীরা শুনবেন কি না সেটা তাঁদের পছন্দ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement