—ফাইল চিত্র।
দেশজোড়া সাত দফার নির্বাচনে সাত পর্বেই ভোট আছে পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যের প্রায় সাত কোটি ভোটার লোকসভার নির্বাচনে ভোট দেবেন। তার জন্য কত খরচ হবে?
গণতন্ত্রের এই মহাযজ্ঞে এলাহি ব্যবস্থা। পশ্চিমবঙ্গে শুধু ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই খরচ হবে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক জন ভোটারকে নির্বাচন কেন্দ্রে নিয়ে যেতে সরকারের প্রশাসনিক খরচ হচ্ছে ৫০ টাকা। এটাই সব নয়। এর বাইরে আছে নিরাপত্তা বাহিনীর খরচ। প্রতি দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী যে-ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সেই খরচও অন্তত ২৫০ কোটি টাকা হতে পারে বলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের হিসেব। তা ধরলে এক জন ভোটারের নিরাপত্তার খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩৫ টাকা। নবান্নের কর্তাদের হিসেব, ‘নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে’ এক জন ভোটারের এ বার ভোট দেওয়ার খরচ দাঁড়াচ্ছে ৮৫ টাকা।
লোকসভার ভোট পরিচালনা করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। তার জন্য খরচ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার জোগায় না। লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের যাবতীয় খরচ মেটাতে হয় রাজ্যকেই। এ বছরের লোকসভা ভোট বাবদ সরকার ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক খরচ খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রস্তুতির জন্য গত বছরের বাজেটে দেওয়া হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। ‘‘সব মিলিয়ে বাজেটে ৩৫০ কোটি বরাদ্দ থাকলেও খরচ বেশি হলে তা-ও দিতে হবে রাজ্যকে,’’ বলেন অর্থ দফতরের এক কর্তা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, নিরাপত্তার খরচ এ বার অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। প্রাথমিক ভাবে ২১৮ কোটি টাকা খরচ ধরা হলেও রোজই যে-ভাবে আধাসেনা বেড়ে চলেছে, তা অন্তত ২৫০ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে বলে মনে করছেন তাঁরা। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে এই খরচ দাঁড়িয়েছিল ২৪৪ কোটি।
নির্বাচন পরিচালনার খরচ অবশ্য প্রতিটি ভোটেই বেড়ে চলেছে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে প্রশাসনিক খরচ হয়েছিল ২০৫ কোটি টাকা। যদিও সে-বার সব মিলিয়ে ভোটের খাতে দিতে হয়েছিল ২৪৩ কোটি। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে সরকারের প্রশাসনিক খরচ বেড়ে হয় ৩০০ কোটি। পরপর দু’টি আর্থিক বছরে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। ভোটের বছরে (২০১৬-১৭) প্রশাসনিক খরচ ১৫০ কোটি হলেও মোট ভোট-বরাদ্দ ছিল ২৭১ কোটি। ২০১৯-২০ সালে ভোট-বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৩৩৮ কোটি টাকা। তার মধ্যে লোকসভা ভোটের প্রশাসনিক খরচ ধরা হয়েছে ২০০ কোটি। গত বছরে এসেছিল ১৫০ কোটি। সব মিলিয়ে তা দাঁড়াচ্ছে ৩৫০ কোটিতে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, লোকসভা ও বিধানসভা ভোট যে-বছর হয়, প্রস্তুতির কাজ হয় তার আগের বছর থেকেই। ভোটার তালিকা ছাপা থেকে, ইভিএম কেনা বা সারানো, কালি কেনা থেকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের পরিকাঠামো— সব খরচই এই খাত থেকে বহন করা হয়। এর বাইরে ভোটকর্মী ও অফিসারদের খরচ, পর্যবেক্ষকদের খরচও বহন করতে হয় রাজ্যকে। এমনকি বাংলা থেকে যাঁরা ভিন্ রাজ্যে পর্যবেক্ষক হয়ে যান, তাঁদের খরচও মেটাতে হয় পশ্চিমবঙ্গকেই।