এলাকার বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারেও তৃণমূলের টিকিটে ময়দানে নামা মমতাজ সংঘমিতা তীক্ষ্ণ কটাক্ষে বিঁধছেন দুর্গাপুরের জামাইকে।
তাল কেটেছিল শুরুতেই।দুর্গাপুরে প্রচারে নেমেই আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, দুর্গাপুরের জামাই হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন।কেউ তেমন আপত্তি না করলেও তৃণমূলের আইনজীবী নেতা তথা দুর্গাপুর নগর নিগমের কাউন্সিলর দেবব্রত সাঁই আচমকা তেড়েফুঁড়ে উঠেছিলেন।জামাই-টামাই বলে পরিচয় দেওয়ায় ঘোর আপত্তি তাঁর।কিন্তু আপাতত সেখানেই শেষ।দার্জিলিং থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে লড়তে আসা বিজেপি প্রার্থীকে আর কোনও অসৌজন্যের মুখে পড়তে হয়নি এখনও।অন্তত দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দীর কাছ থেকে নয়ই।এলাকার বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারেও তৃণমূলের টিকিটে ময়দানে নামা মমতাজ সংঘমিতা তীক্ষ্ণ কটাক্ষে বিঁধছেন দুর্গাপুরের জামাইকে।কিন্তু সুকৌশলে ধরে রাখছেন সৌজন্যের মোড়কটাও।
বিপাকে পড়েছেন, দুর্গাপুরের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা শহরের অন্যতম দাপুটে তৃণমূল নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় (জহর)।অহলুওয়ালিয়া তাঁরই বাড়ির জামাই যে!
‘‘যম-জামাই-ভাগনা/ তিন নয় আপনা।’’স্টিল টাউনশিপের চণ্ডীদাস পার্টি অফিসে বসে এইটুকু বলেই হা হা করে হেসে উঠলেন অমিতাভ।নগর নিগমের ডেপুটি মেয়র ছিলেন গত মেয়াদে।এখন মেয়র পারিষদ।দুর্গাপুরে তৃণমূলের পুরনো নেতাদের অন্যতম।কিন্তু পরিবার আর রাজনীতি মিলে-মিশে গিয়ে এ বার এমন প্যাঁচে ফেলেছে তাঁকে যে, অমিতাভবাবু না পারছেন গিলতে, না পারছেন উগরোতে।
ভোটের প্রচারে মমতাজ সংঘমিতা। — নিজস্ব চিত্র
দাপুটে মেয়র পারিষদ নিজে অবশ্য সে কথা মানছেন না।দুর্গাপুরের প্রবল গরমে দিনভর প্রচার শেষে চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ।কিন্তু ‘জামাইবাবু’কে ময়দান ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন উঠতেই নিমেষে চাঙ্গা হয়ে উঠছেন।বলছেন, ‘‘আমার মা গত হয়েছেন।এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমার মা।তাঁর প্রার্থীই আমার প্রার্থী।মাঝখানে কেউ নেই, আর কাউকে চিনি না।’’কিন্তু লড়াই তো এ বার টানটান।জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে জামাইবাবু যদি শ্যালককে পাশে থাকার অনুরোধ করেন, তখন কী হবে? ‘‘না না, সেটা উনি করবেন না, কারণ আমিও তাঁকে কখনও কোনও অনুরোধ করি না।’’অর্থাৎ আপনারা দু’জনেই পরিবার এবং রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলা অপছন্দ করেন? এ বার সতর্ক অমিতাভ।জামাইবাবুর দায় নিচ্ছেন না।শুধু নিজের অবস্থানটা ব্যাখ্যা করছেন।বলছেন, ‘‘আমি অন্তত গুলিয়ে ফেলি না।সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বহু বছরের সাংসদ।অনেক বার কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন।কিন্তু আমি কখনও কোনও সুযোগ-সুবিধা তাঁর কাছ থেকে নিইনি।দিল্লিতে যখন যাই, তখন দিদির (সুরেন্দ্রর স্ত্রী) বাড়িতে উঠিও না।কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্ত সহায়ক অশোক গুহ আমাদের দুর্গাপুরের ছেলে।তিনিই আমার থাকার ব্যবস্থা করে দেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তা হলে জামাইবাবু সুরেন্দ্র আর শ্যালক অমিতাভর দল আলাদা হওয়ায় কি দিদির সঙ্গে সম্পর্ক উঠে যাচ্ছে ভাইয়ের? অমিতাভ বললেন, ‘‘তা নয়।দিল্লি গেলে দিদির বাড়িতে যাই, তাঁকে একবার প্রণাম করে আসি।আমাদের পরিবারে আমাদের প্রজন্মে দিদিই সবার বড়।তাঁকে অসম্মান তো করতে পারি না!’’ এটুকু বলেই থেমে যাচ্ছেন দুর্গাপুরের মেয়র পারিষদ।দিদির পাশাপাশি জামাইবাবুকে প্রণাম করেন কি না, সে কথাটা ভোটের বাজারে উহ্যই রেখে দিচ্ছেন।
দুর্গাপুরের বিদায়ী সংসদ তথা এ বারের নির্বাচনে অহলুওয়ালিয়ার প্রধান প্রতিপক্ষ মমতাজ সংঘমিতা কী বলছেন? শ্বশুরবাড়ির শহরের প্রতি জামাই অহলুওয়ালিয়ার আবেদনের প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি প্রথমে একগাল হাসছেন।তার পরে মুখভঙ্গিতে শ্লেষের ঢেউ খেলিয়ে বলছেন বলছেন, ‘‘জামাই যদি ঘরজামাই হতে চান, তা হলে সেটা মোটেই শুভ লক্ষণ নয়।’’এতেই থামছেন না সংঘমিতা।একজন জামাই, কখন ঘরজামাই হতে চান, সে প্রশ্নটাও তুলছেন মুচকি হেসে।উত্তরটা নিজেই দিতে গিয়েও দিচ্ছেন না।বোঝাতে চাইছেন যে, সৌজন্যের খাতিরেই জামাইয়ের ‘অকর্মন্যতা’র প্রসঙ্গটা উহ্য রাখছেন।
আরও পড়ুন: বাঙালিয়ানায় ভর করে নববর্ষেও অভিনব জনসংযোগ তৃণমূল প্রার্থীদের
যাঁকে জেতানোর জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন অমিতাভ, সেই সংঘমিতার ‘ঘরজামাই’তত্ত্বকে কী চোখে দেখছেন তিনি।‘‘আমাদের সাংসদ যা বলেছেন, রাজনৈতিক ভাবে তাকে আমি সমর্থনই করছি।’’বলেই আবার হাসছেন অমিতাভ।তার পরেই সপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টা করে বলছেন, ‘‘বিজেপি দলটাকে আমি ঘৃণা করি।’’
বিজেপি দলটাকে ঘৃণা করেন? তা হলে কি বিজেপি নেতাদেরও...
পুজো দিচ্ছেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। — নিজস্ব চিত্র
‘‘আরে না না।সে কথা কী করে বলব! সেটা বললে তো আমার দিদিকেই অপমান করা হয়।’’হেসে পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করছেন অমিতাভ। তার পরে দারুণ কৌশলে খোঁচা দেওয়ার ভঙ্গি করেও মান বাঁচিয়ে দিচ্ছেন অহলুওয়ালিয়ার।বলছেন, ‘‘ওঁর দল ওঁকে দুর্গাপুরে পাঠিয়েছে ঠিকই।কিন্তু উনি একটানা দুর্গাপুরে থাকবেন কি না, আমার সংশয় আছে।কারণ ঘরজামাই সবাই হতে চান না, ওটা প্রেস্টিজের ব্যাপার।’’
(দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খবর পেয়ে জান আমাদের রাজ্য বিভাগে।)