Lok Sabha Election 2019

সপ্তমীতেও শুরু থেকে ভোগাল সেই ভোটযন্ত্র

যন্ত্র এমনই ভুগিয়েছে যে, সাতসকালে বুথে পৌঁছেও অনেকে ভোট না-দিয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০২:৩৮
Share:

সপ্তম এবং শেষ দফার ভোট মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ হয়েছে দাবি করছে নির্বাচন কমিশন তথা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর কার্যালয়। কিন্তু রবিবারের ভোটেও ইভিএমে গোলমালের সমস্যা পিছু ছাড়ল না কমিশনের। অসংখ্য জায়গা থেকে ইভিএম-বিভ্রাটের খবর আসে। চরমে ওঠে ভোটারদের হয়রানি।

Advertisement

যন্ত্র এমনই ভুগিয়েছে যে, সাতসকালে বুথে পৌঁছেও অনেকে ভোট না-দিয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। অসংখ্য ভোটারকে লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ক্ষণ। কেষ্টপুরের মাঝেরপাড়ার মধ্য কৃষ্ণপুর শিক্ষা নিকেতনের লাইনে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়েও ভোট দিতে না-পারায় প্রিসাইডিং অফিসার ইন্দ্রনীল দে-কে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। ইন্দ্রনীলবাবু কেঁদে ফেলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানান। পরে অবশ্য তিনি বলেন, ‘‘ভিভিপ্যাট মেশিনে একটা সমস্যা হয়েছিল। তার জেরে ভোট শুরু করতে দেরি হয়েছে।’’

খড়দহের বান্দিপুরে সকালে ইভিএম খারাপ হওয়ায় ভোটগ্রহণ শুরু করতে দেরি হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কী কারণে ভোটে দেরি, তা তাঁদের জানানো হয়নি। সেই জন্য ক্ষিপ্ত জনতা পথ অবরোধ করে। মিনিট ১৫-২০ পরে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেন। উত্তর দমদমে সিদ্ধেশ্বরী বাজারের কাছে একটি স্কুলের ১৯৫ নম্বর বুথে ইভিএম খারাপ বিগড়ে যাওয়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দমদম থানার অধীনে অন্তত পাঁচটি বুথে ইভিএমে সমস্যা হয়েছিল। কংগ্রেস নেতা শক্তি মৈত্র জানান, বিভ্রাট সামলাতে তিন বার ভোটযন্ত্র বদলাতে হয়েছে। সকাল ১০টা নাগাদ সেখানে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রবীন্দ্রভারতী ও দমদমের কুমার আশুতোষ ইনস্টিটিউশনে দু’টি করে ইভিএম বিকল হয়ে যায়। ভোট শুরু হয় দেরিতে। দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ভোটারদের। মানিকতলায় ১৬টি ইভিএম গোলমালের অভিযোগ তোলে সিপিএম। যন্ত্র-বিভ্রাটে আধ ঘণ্টার ভোট হয়নি বেলগাছিয়ার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে।

গড়িয়ার এসবি কেজি স্কুলের ১৫৮ নম্বর বুথে রাত পর্যন্ত ভোট নিতে হয়। কারণ, যন্ত্র-সমস্যায় সেখানে ভোট শুরু হয় দেরিতে। সোনারপুর পূর্ব ও টালিগঞ্জের কয়েকটি বুথে ইভিএম-সমস্যা চলে প্রায় ১০টা পর্যন্ত। এ ছাড়াও এ দিন রাজ্যের ন’টি লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইভিএম-বিভ্রাটের খবর পাওয়া গিয়েছে।

কেন খারাপ হয় ইভিএম?

কমিশনের প্রাক্তন এক কর্তা জানান, ইভিএম সংযোগের সময়েই সমস্যা হতে পারে। ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ইভিএম যুক্ত করতে গিয়েও বিপত্তি হয়ে থাকে। তা ছাড়া ভিভিপ্যাট অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই সামান্যতম হেরফেরে গোলমাল করতে পারে সেই যন্ত্র। আবহাওয়ার তাপমাত্রাও যন্ত্রের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ভিভিপ্যাটে। সেই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়। তবে সাধারণ ভাবে ভোটগ্রহণের আগে অন্তত তিন বার যন্ত্রের পরীক্ষা করা হয়। তার পরেও অনেক সময় কার্যক্ষেত্রে গোলমাল হওয়ার ইতিহাস চলে আসছে। তাঁর কথায়, ‘‘যতই হোক, এটি তো যন্ত্র। যতই পরীক্ষা করা হোক না কেন, গোলমাল করতেই পারে। সেই জন্য ১২০ শতাংশ ইভিএম হাতে নিয়ে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। কোনও ইভিএম গোলমাল করলে তৎক্ষণাৎ যাতে তা বদলে ফেলা যায়। তবে সব ক্ষেত্রে যে যন্ত্র বদলাতে হয়, তা নয়।’’

তবে ইভিএমের গোলমাল সামগ্রিক ভাবে ভোটে প্রভাব ফেলেনি বলে দাবি করেছেন রাজ্যের সিইও আরিজ আফতাব। ভোট শেষে তিনি বলেন, ‘‘ইভিএমে সমস্যা হয়েছিল, তবে তা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। যথেষ্ট সংখ্যায় ইভিএম মজুত থাকায় সমস্যা হয়নি।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইভিএমে নানা কারচুপির পন্থা করে রেখেছে ওরা (বিজেপি)। বিরোধীদের বলেছি, একসঙ্গে কোমর বেঁধে নামুন। এটা আমরা ছাড়ব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement