দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে তৃণমূলের র্যাপ ভিডিয়ো।—ভিডিয়ো গ্র্যাব।
থিম সং-এর জবাব র্যাপে। ‘এই তৃণমূল আর না’-র পাল্টা ‘এ বার ২০১৯, বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ’।
বাবুল সুপ্রিয়র মিউজিক ভিডিয়োর তালে দিলীপ ঘোষরা কোমর দোলানো শুরু করতেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল গেরুয়া শিবিরে, আর অস্বস্তি বেড়েছিল তৃণমূলের। কিন্তু একই অস্ত্রে পাল্টা ধাক্কাটা দিতে খুব বেশি সময় নিল না তৃণমূল। তৃণমূলের সমর্থনে তৈরি এক নতুন র্যাপ বৃহস্পতিবার রাত থেকে হু হু করে ভাইরাল হতে শুরু করল সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত বাংলার শাসক দলের আইটি সেল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধ বিচরণ যাঁদের, সেই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে র্যাপ এমনিতেই বেশ জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক বলিউডি ছবি ‘গাল্লি বয়’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ভারতীয় তরুণদের মধ্যে র্যাপ-চর্চা আরও বেড়েছে। তৈরি জমিতে চারা বসালে ফল ধরতে সময় যে বেশি লাগে না, সে কথা কে না জানেন। তাই তৃণমূলের র্যাপ বাজারে পড়তেই হু হু করে হিট।
আরও পড়ুন: সোনা কাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানাল সিবিআই
বিজেপির জন্য যে মিউজিক ভিডিয়ো তথা থিম সং তৈরি হয়েছে, তা বানিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু তৃণমূলেরটা কে বানালেন? কোনও নেতা-মন্ত্রীর নাম কিন্তু উঠে আসছে না। উঠে আসছে না তৃণমূল আইটি সেলের কোনও কর্তার নামও। তৃণমূল সূত্রের খবর, কলকাতারই এক গায়ককে দিয়েই র্যাপটা বানানো হয়েছে। কিন্তু ভিডিয়ো তৈরি হওয়ার পর তা বাজারে ছাড়া হয়েছে বিদেশ থেকে। আমেরিকার বস্টন থেকে কেউ এই ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় তৃণমূলের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ঘুরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিয়োটি।
তৃণমূলের বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক ফেসবুক পেজ এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিজস্ব ফেসবুক পেজগুলোয় শেয়ার হয়েছে ভিডিয়োটি। তার পরে স্বাভাবিক নিয়মেই ছড়িয়ে গিয়েছে সাধারণ নেটিজেনদের হাতেও, কোনও নির্দিষ্ট রাজনীতির সঙ্গে যাঁদের যোগ নেই।
বাবুল সুপ্রিয় যে মিউজিক ভিডিয়োটি তৈরি করেছেন বিজেপির জন্য, সেটির বিরুদ্ধে প্রথমে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল। তখনও কোনও পূর্ণাঙ্গ ভিডিয়ো বাজারে আসেনি। গানটির রেকর্ডিং-এর টুকরো টুকরো দৃশ্য ভাইরাল হয়েছিল। কমিশনের ছাড়পত্র না নিয়ে ওই গান বা গানের দৃশ্য কেন প্রকাশ করা হল, সে প্রশ্ন তুলেই তৃণমূল কমিশনে যায়। বাবুল সুপ্রিয়কে কমিশন শো-কজও করে। কিন্তু বিজ্ঞাপন হিসেবে যতক্ষণ না ছাড়া হচ্ছে কোনও ভিডিয়ো বা গান, ততক্ষণ কোনও অনুমতি বা ছাড়পত্রের প্রয়োজন নেই বলে কমিশনকে লেখা চিঠিতে জানানো হয় বিজেপির তরফে। নিখরচায় কোনও ভিডিয়ো বা গান বা প্রচারের উপকরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া হলে কমিশনের অনুমতি বা অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে দাবি করে কমিশনের তৈরি করা বিধির অংশবিশেষও তুলে ধরা হয় বিজেপির তরফে।
বাবুলকে কমিশন শো-কজ করেছিল ঠিকই। কিন্তু গান বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। কয়েক দিন ধরে বিজেপির ওই গানেরই একটি অংশ বেছে নিয়ে পাল্টা স্লোগান তুলে দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু র্যাপটা বাজারে আসার পর থেকে বোঝা যাচ্ছে, ওই স্লোগান ছিল নেহাতই ‘স্টপগ্যাপ অ্যারেঞ্জমেন্ট’।
কার মাথা থেকে বেরোল এই পরিকল্পনা? এমন একটা শানিত ছন্দ এত দ্রুত নামিয়ে ফেললেন কে? রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা তথা দলের মুখ্য জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বললেন, ‘‘আমাদের তো অত টাকা নেই যে, মোদী-শাহের বিজেপির মতো শ’য়ে শ’য়ে কোটি টাকা সোশ্যাল মিডিয়ায় খরচ করব। কিন্তু আমাদের অনেক একনিষ্ঠ শুভানুধ্যায়ী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলকে নিয়ে আবেগ রয়েছে এবং চিন্তাশক্তি রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: নীরব মোদীর জামিনের বিরোধিতা করতে নয়া নথিপত্র দিল সিবিআই, ইডি
এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে তৃণমূল নেতারা নারাজ। বিজেপির গান যে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধে চলছে, তাতে তৃণমূলের র্যাপ ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়ার পথেও যে কোনও বাধা নেই, সে বিষয়ে দলের আইটি সেল নিশ্চিত। তাই কে বানালেন, কী ভাবে বানালেন, কার মস্তিষ্কপ্রসূত— এ সব বিষয় নিয়ে কেউই বেশি মুখ খুলতে চাইছেন না।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)