ভোট ধরে রাখতে এ বার ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর রাস্তায় ফিরতে চাইছে পূর্ব বর্ধমান জেলা সিপিএম। মঙ্গলবার দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের উপস্থিতিতে বর্ধমান পূর্ব ও বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা এলাকার নেতাদের নিয়ে বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বামপন্থী মনোভাবাপন্ন বলে এলাকায় চিহ্নিতদের বাড়ি গিয়ে অনুমতি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে দলের কর্মী-সমর্থকদের। আর যে সব এলাকায় পৌঁছনো যাবে না, সেখানে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’ তৈরি করে লাগাতার ‘মেসেজ’ পাঠাতে হবে। যাঁদের মোবাইল নেই, তাঁদের পাঠানো হবে চিঠি।
সিপিএম নেতাদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, এক সময় মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে নানা জনের বাড়িতে সময় কাটিয়ে সুখ-দুঃখের কথা শুনে জনভিত্তি মজবুত করেছিলেন
তাঁদের পূর্বসূরিরা। দল রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার পর্বে সে রেওয়াজ উঠেই গিয়েছিল। এখন দলের ‘রক্তক্ষরণ’ হয়েই যাচ্ছে। নতুন ভোটারদের টানার সঙ্গে সঙ্গে এই ‘রক্ত ঝরা’ আটকানোও খুব জরুরি। তাই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে সামনাসামনি কথা বলার বিকল্প নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলা সিপিএমের এক নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বছরের শেষ দিকে ‘কৃষক সভা’র উদ্যোগে সিঙ্গুর থেকে রাজভবন অভিযানের সময়েও দল ফিরে গিয়েছিল ‘পুরনো দিনে’র পন্থায়। সেখানে সমর্থক এবং বামপন্থী মনোভাবাপন্নদের বাড়িতে রাত কাটিয়েছিলেন পদযাত্রীরা। এক-এক জনের রাতের ও পরদিন সকালের জলখাবারের ভার এক-একটি পরিবারকে নিতে আর্জি জানানো হয়।
জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, সংগঠনের নিচুতলার নেতাদের নির্দিষ্ট সংখ্যায় বাড়ি ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। দৈনন্দিন কাজ সারার পরে, তাঁদের ওই সব পরিবারগুলির সঙ্গে (পরিবারগুলির আপত্তি না থাকলে) অন্তত আধ ঘণ্টা সময় কাটানোর কথা বলা হয়েছে। সেখানে তাঁরা এখনও সিপিএমের সঙ্গে রয়েছেন, না মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তা আলোচনার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করবেন নেতারা। যদি কেউ সমালোচনা করেন, তা হলে তার যুক্তিভিত্তিক জবাব দেওয়া এবং সংশ্লিষ্টকে বোঝানোর উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সেই সঙ্গে বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’র মাধ্যমে প্রচারে। ইতিমধ্যে ‘নিজের ভোট নিজে দিন’ এই বার্তা নিয়ে জেলা সিপিএমের তরফে দুটি ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’ তৈরি করা হয়েছে। একটিতে সরাসরি সংগঠনের লোকদের রাখা হয়েছে। তাঁদের ‘সি-ভিজিল’, ‘ভোটার হেল্পলাইন’-এর মতো ‘অ্যাপ’গুলি কী ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আর একটি ‘গ্রুপ’ তৈরি হয়েছে পাড়াভিত্তিক। বামপন্থী মনোভাপন্ন মানুষজনকে সেখানে রাখা হয়েছে। ভোট দিতে যেতে না পারলে বা কোনও অপ্রীতিকর মুহূর্ত তৈরি হলে কী ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে সে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাবে, সে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে সেখানেও। জেলায় আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের একটা বড় অংশে দলের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে বলে খবর রয়েছে সিপিএমের জেলা নেতাদের কাছে। বিশেষ করে ওই জায়গাগুলিতে ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-প্রচারে নজর দেওয়া হচ্ছে।
সিপিএমের এক জেলা নেতার মন্তব্য, ‘‘ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের রাস্তাটা চালু রাখা দরকার। আমরা সে চেষ্টাই করছি।’’