মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস-বিজেপির গোপন সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এর আগেই কংগ্রেসের ভোট তৃণমূলকে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সেই সুরেই এক ধাপ এগিয়ে বাম-সমর্থকদের কাছে তিনি আবেদন করলেন, ‘‘এখনও যাঁরা বামপন্থী দল করেন, দয়া করে তাঁরা বিজেপির কাছে নিজেদের বিক্রি করবেন না।’’
রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী ভোট যাতে কোনও ভাবে ভাগাভাগি হয়ে আখেরে বিজেপিরই সুবিধা না-হয়, সেই জন্য বারে বারেই ভোটারদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছেন তৃণমূল নেত্রী। এ রাজ্যে তৃণমূলকে ঠেকাতে তলে তলে কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি একজোট হয়ে লড়াইয়ে নেমেছে বলে অনেক সময়েই অভিযোগ তোলেন তিনি। কিন্তু তার জেরে বিজেপিরই বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে বুঝে মমতা এ দিন অতীতের বাম-দুর্গ বর্ধমানের রায়নায় বললেন, ‘‘সিপিএমের হার্মাদরাই এখন বিজেপির ওস্তাদ। রাজনৈতিক ভাবে লড়তে না-পেরে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি একসঙ্গে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করতে চাইছে। আর আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মোদীকে হটানোর লক্ষ্যে স্থির।’’
সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলই কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেবে বলে ফের দাবি করলেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে সব ক’টিই তৃণমূল পেলে কেন্দ্রে সরকার গঠনে তারাই অগ্রণী ভূমিকা নেবে বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এ দিন বর্ধমানে তিনটি নির্বাচনী সভার মধ্যে পূর্বস্থলীতে তারই পুনরাবৃত্তি করে মমতা বলেন, ‘‘বাংলাই দিল্লি দখল করবে। আগামী দিনে যে সরকার হবে, আমরাই সবাইকে নিয়ে তা তৈরি করব।’’ উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক
‘ভাল’ বলে আগেই দাবি করেছেন মমতা। সেই সূত্রেই এই রাজ্যগুলির প্রধান দলকে সঙ্গে নিয়ে তিনিই আগামী লোকসভা তৈরিতে অন্যতম নিয়ন্ত্রক হবেন বলে দাবি করছেন তিনি। সেই দাবিতে একধাপ এগিয়ে এ দিন মমতার বক্তব্যে রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা চলছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রসঙ্গত, বিজেপি বিরোধী জোটের অন্যতম আহ্বায়ক ছিলেন মমতাই। তাঁরই আহ্বানে গত ১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেডে দেশের তাবড় আঞ্চলিক দলগুলির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হয়েছিলেন। কংগ্রেসও সেই মঞ্চে উপস্থিত হয়ে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছিল।
তার পর দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলিকে একজোট করার প্রক্রিয়া অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল তাঁর। আঞ্চলিক দলগুলির শক্তিবৃদ্ধিতে জোর দিয়ে রাজ্যেও একশ শতাংশ আসনে জয়ের স্লোগান দিয়েছিলেন মমতা।
প্রথম তিন দফার ভোটের প্রচারে বারবার তা সামনে এনেছেন তৃণমূলনেত্রী। এদিন আরও এক পা এগিয়ে সেই ঐক্যবদ্ধ আঞ্চলিক শক্তির নেতা হিসাবে তিনি তৃণমূলকে দেখতে চেয়েছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এ দিনই বর্ধমানের কালনায় প্রচারে এসে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস একই মুদ্রার এ-পিঠ, ও-পিঠ। এদের লক্ষ্য বিকাশ নয়। গুন্ডাবাজি।’’