সিপিএমের জেতা রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ আসন দাবি করে সমঝোতার বল থমকে রেখেছে কংগ্রেস। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে কংগ্রেসের টালবাহানার মধ্যেই ওই দুই আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিল বামফ্রন্ট। রায়গঞ্জে মহম্মদ সেলিম ও মুর্শিদাবাদে বদরুদোজ্জা খানকেই সিপিএম প্রার্থী করছে।
বামফ্রন্টের বৈঠকে শুক্রবার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস প্রার্থী দিলে কংগ্রেসের হাতে থাকা চার আসনেও বামেরা প্রার্থী দিয়ে দেবে। বামফ্রন্টের এই কৌশলে চাপ তৈরি হয়েছে কংগ্রেস শিবিরে। প্রথমত, সিপিএমের জেতা আসন নিয়ে জেদাজেদি করে সমঝোতা ভেস্তে দেওয়ার ‘দায়’ কংগ্রেসের উপরেই ফেলে দেবে বামেরা। দ্বিতীয়ত, হারা আসন নিয়ে জেদ করতে গিয়ে হাতে-থাকা আসনগুলিও ভোট কাটাকাটিতে হাতছাড়া হওয়ার ভয় থাকবে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র অবশ্য দাবি করেছেন, একা লড়েও চারটি আসন তাঁরা জিতবেন। কিন্তু বামেদের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে সওয়াল করে কংগ্রেস সাংসদদের মন্তব্যেই ‘অন্য ইঙ্গিত’ মিলতে শুরু করেছে।
আলিমুদ্দিনে এ দিন শরিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, ‘‘দেশে সাম্প্রদায়িক বিজেপি এবং রাজ্যে অগণতান্ত্রিক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব ভোটকে একজোট করার ডাক আমরা দিয়েছি। আমরা সেই চেষ্টা শুরু করেছি, রাজ্য স্তরে সিদ্ধান্তের পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, বিজেপি ও তৃণমূলের বাইরে থাকা রাজ্যের ৬টি আসনে কেউ কারও বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন না করে।’’ কিন্তু রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ ঘিরে টানাপড়েনের জন্যই তাঁরা ওই দুই কেন্দ্রে এ বার প্রার্থী ঘোষণা করে দিচ্ছেন বলে জানান বিমানবাবু। সেই সঙ্গেই বলেন, ‘‘কংগ্রেসের জেতা চারটি আসনে আমরা প্রার্থী দেব না, এটাও আমাদের সিদ্ধান্ত।’’
কিন্তু দাবি না ছেড়ে কংগ্রেস যদি রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদে প্রার্থী দেয়, তখনও কি ওই চার আসন ছেড়ে রাখা হবে? বিমানবাবুর জবাব, ‘‘যদি কংগ্রেসের দিক থেকে অন্য কোনও বার্তা আমাদের কর্ণকুহরে পৌঁছয়, তখন আবার বামফ্রন্টের বৈঠক করে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে!’’ ফ্রন্টের অন্দরে সব দলই এ দিন সওয়াল করেছে, কংগ্রেস যদি সেলিমের নাক কাটতে মরিয়া হয়, তা হলে বামেরাই বা কেন কংগ্রেসের যাত্রাভঙ্গ করবে না? বিজেপি ও তৃণমূলকে রোখার ডাক দিয়েই তখন ওই চার আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে।
বিমানবাবুর ঘোষণার পরে সোমেনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সমঝোতার আলোচনা চলাকালীন এমন সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। কংগ্রেসের সাহাষ্য ছাড়া সিপিএম একটা আসনও জিততে পারবে না! আমাদের কোনও ক্ষতি হবে না। আমরা একা লড়েও ওই চারটে জিতব।’’ গোটা ঘটনা ফের এআইসিসি-কে জানাচ্ছেন সোমেনবাবুরা। এর পরেও সমঝোতা হবে কি না, তা বামেদেরই ঠিক করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
নির্বাচন কমিশনের দফতর দরবার করতে গিয়ে জঙ্গিপুরের কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য এ দিনই বলেছেন, ‘‘বামেদের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে আমি ১০০% আশাবাদী। জিততে গেলে জোট চাই। একান্তই না হলে তখন একাই লড়তে হবে।’’ আর এক সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী বলেছেন, সমঝোতা একান্তই না হলে অন্তত ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হোক। যদিও চাপ বাড়িয়ে সেলিমের মন্তব্য, ‘‘বন্ধুত্ব আর লড়াই একসঙ্গে হয় না! হয় বন্ধুত্ব, নয় লড়াই!’’