নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তালিকা ঘোষণার পরে তৃণমূলের একেবারে নবাগত প্রার্থীরাও প্রচারে নেমে পড়েছেন। কিন্তু তাদের কে কোন আসনে লড়বে, তা-ই নিয়ে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসে আলোচনা আর ফুরোচ্ছে না! সমঝোতায় রাজি দু’পক্ষই। কিন্তু আসন ছাড়তে তাদের বিস্তর অসুবিধা। এক জট থেকে তাই অন্য জটে গড়াচ্ছে আলোচনা!
সিপিএম ও কংগ্রেসের জেতা ৬টি আসনে কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে না, এই সমঝোতায় আগেই পৌঁছেছে দু’পক্ষ। এখন জট অব্যাহত অন্য কিছু আসন নিয়ে। যার বেশির ভাগই আবার বাম শরিকেরা লড়ে থাকে। সিপিআইয়ের মতো যে বাম শরিক বিহার, ঝাড়খণ্ড বা তামিলনাড়ুতে কংগ্রেসের সঙ্গে পুরোদস্তুর জোট করেছে, তারাও বাংলায় কোনও আসন কংগ্রেসকে দিতে নারাজ! আবার এই মরা গাঙে কংগ্রেসের নানা নেতাও লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে চান। তাঁদের জায়গা করে দিতে আসন খুঁজতে হচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেসকে। এমতাবস্থায় বুধবার রাত পর্যন্ত জট ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য নেতা রবীন দেব, মৃদুল দে ও প্রদেশ কংগ্রেসের সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যেরা। ফের দু’পক্ষের আলোচনা হওয়ার কথা আজ, বৃহস্পতিবার।
অন্তত ২০টি আসনের জন্য বামেদের প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়েই আছে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে রফা কোন দিকে এগোয়, তা না দেখে প্রার্থী ঘোষণা করে দিতে চায় না বলে বামফ্রন্ট আরও দিনদুয়েক অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলিুমদ্দিনে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকে শরিকদের সেই কথাই বলেছেন বিমানবাবু। কিন্তু আসনের রফাসূত্র নিয়ে শরিকদের সুর নরম করানো যায়নি! যদিও এই মুহূর্তে শরিকদের হাতে কোনও লোকসভা আসন নেই। সিপিএমের সাহায্য ছাড়া পুরসভার কোনও ওয়ার্ড জেতার ক্ষমতা তাদের আছে, এমন দাবিও বাম শিবিরের কেউ করছে না!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও বালুরঘাটের মধ্যে অন্তত একটি আসন চেয়েছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, ওখানে একটি আসন না পেলে মালদহের উপরে উত্তরবঙ্গের গোটা এলাকায় তাদের প্রতীক দেখা যাবে না! রায়গঞ্জ আগেই সিপিএমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার সিপিএমের যুক্তি, ওই অঞ্চলে জলপাইগুড়ি ছাড়া সবই শরিকদের আসন। জলপাইগুড়ি ছেড়ে দিলে আবার তাদের হাত খালি হয়ে যাবে! শরিক আর কংগ্রেসের মধ্যে কাকে ছেড়ে কাকে রাখবে, ভেবে হিমসিম খাচ্ছে সিপিএম!
পশ্চিমে আবার পুরুলিয়া আসনের দাবি কোনও মতেই ছাড়তে রাজি নয় কংগ্রেস। তাদের সঙ্গে সিপিএম একমত। কিন্তু পুরুলিয়া থেকে পিছোতে নারাজ ফরওয়ার্ড ব্লক। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘পুরুলিয়া অন্তত না পেলে কোন মুখে সমঝোতা এগোবে? আমাদেরও তো মর্যাদা বাঁচাতে হবে!’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যে বলছেন, ‘‘এখন যা দাঁড়াচ্ছে, আমরা ছাড়া আর সবাই শের! সকলেরই পছন্দের আসন চাই। নিজেদের ভাগ থেকে কত আর আসন ছাড়া যাবে!’’ দু’পক্ষের নেতারাই অবশ্য বুঝতে পারছেন, বাম-কংগ্রেসের মধ্যে বিভাজন চওড়া হলে বিজেপির হাসিও চওড়া হবে!