general-election-2019/west-bengal

বাম-তৃণমূলের সংঘর্ষ, একাধিক বাড়িতে আগুন

তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজেপির লোকেরা আমাদের কর্মীদের মারধর করে দলীয় অফিস ভাঙচুর করেছে। ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। অভিযোগের মুখ ঘুরিয়ে দিতে এখন ওরা গ্রাম দখলের কথা রটাচ্ছে।’’ 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইলামবাজার,  নানুর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ০১:২১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

ভোটের পরের দিনই রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল ইলামবাজারের ধরমপুরের পাইকুনি গ্রামে। অভিযোগ উঠল, সিপিএমের পোলিং এজেন্টের বাড়িতে আগুন দিয়েছে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। আগুন ছড়িয়েছে এলাকার আরও কয়েকটি বাড়িতে। শাসকদলের পাল্টা অভিযোগ, আগুন লাগানো হয়েছে সেখানকার এক তৃণমূলকর্মীর বাড়িতেও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে ইলামবাজারের ধরমপুরের পাইকুনি গ্রামে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যা থেকে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট শেখ খিলাফতের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয় তৃণমূল সমর্থক শেখ সুকুরের। সিপিএমের অভিযোগ, ওই সময়েই তৃণমূলের কয়েক জন গিয়ে শেখ খিলাফতের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তৃণমূলের পাল্টা নালিশ, শেখ সুকুরের বাড়িতেই আগুন লাগায় সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা।

এ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘সিপিএম নিজেরাই আগুন লাগিয়ে আমাদের নামে অভিযোগ করছে। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগাযোগ নেই। সিপিএমের নেতা তথা বোলপুরে কেন্দ্রের বামপ্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের বক্তব্য, ‘‘আমাদের পোলিং এজেন্টের বাড়িতে তৃণমূলের লোকেরা আগুন দিয়েছে। তার পাল্টা তৃণমূলের একটি বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা খবর পেয়েছি, পাশের গ্রামেও দুষ্কৃতী-বাহিনী বেশ কিছু বাড়িতে আগুন দিয়েছে।’’

Advertisement

এ দিকে, ভোটের এক দিন পরেই ছবি বদলাল নানুরের বন্দর গ্রামে। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ চলে যেতেই সেখানে আনাগোনা শুরু হয়েছে মোটরবাইক সওয়ার সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের। কাপড়, গামছায় মুখ ঢাকা সকলের। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে তারা। ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও নালিশ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। শাসক দলের দিকে আঙুল উঠলেও, তা উড়িয়েছে তৃণমূল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ভোট-পর্ব ঘিরে বিজেপি ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিবাদে উত্তপ্ত হয় ওই গ্রাম। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী গ্রামে পৌঁছয়। বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

অভিযোগ, ভোট মিটতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে। গ্রামের বাসিন্দা তথা বিজেপির নানুর ‘এ’ মণ্ডল কমিটির শক্তি প্রমুখ পথিক লোহার বলেন, ‘‘দক্ষিণপাড়ায় পাঁচটি পরিবার ছাড়া সবাই বিজেপির সমর্থক। গ্রামের দখল নিতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মুখ ঢেকে মোটরবাইকে পাড়ায় পাড়ায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানা হুমকিও দিচ্ছে। রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিতে হচ্ছে আমাদের।’’

মাঝপাড়ার বাসিন্দা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুলশিক্ষক, স্থানীয় এক ওষুধের দোকানদার বলেন, ‘‘কথায় আছে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। আমাদের অবস্থা এখন তাই। এর আগে এমন পরিস্থিতি বন্দরে কখনও হয়নি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজেপির লোকেরা আমাদের কর্মীদের মারধর করে দলীয় অফিস ভাঙচুর করেছে। ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। অভিযোগের মুখ ঘুরিয়ে দিতে এখন ওরা গ্রাম দখলের কথা রটাচ্ছে।’’

বিজেপির মণ্ডল কমিটির সভাপতি বিনয় ঘোষ বলেন, ‘‘ভোটের অনেক আগে থেকেই ওরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ভোট দিতে যেতে নিষেধ করেছিল। তা অগ্রাহ্য করে ভোট দেওয়ায় এখন গ্রাম দখলের চেষ্টা করছে। আমরাও পুলিশে অভিযোগ জানাব।’’ পুলিশ জানায়, বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য দিকে ভোটে নেতৃত্ব দেওয়ায় নানুর ও ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার দুই বিজেপি নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসকদল অবশ্য অভিযোগ মানেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ নানুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটের কাছে বিজেপির নানুর ‘বি’ মণ্ডল কমিটির সভাপতি মনোজ সাধুর উপর চড়াও হয় ৭-৮ জন দুষ্কৃতী। অভিযোগ, লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মনোজবাবুর মাথা ফেটে যায়। তাঁকে নানুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বিজেপির নানুর ব্লক কমিটির সভাপতি বিনয় ঘোষের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল ওঁকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছিল। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওঁর উপর হামলা চালায়।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের দলের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত নয়।’’ পুলিশ জানায়, ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অন্য দিকে একই কারণে বিজেপির ময়ূরেশ্বরের বহড়া শক্তি কেন্দ্র প্রমুখ টোটন মণ্ডলকেও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বহড়া পেট্রোল পাম্পের সামনে বসেছিলেন টোটনবাবু। তখনই তিন জন মোটরবাইক আরোহী সেখানে গিয়ে তাঁকে মারধর করে। চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় মহিলারা লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে যান। বেগতিক দেখে দুষ্কৃতীরা পালায়। ওই ঘটনার পরে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার দাবিতে কোটাসুর-রামনগর সড়ক অবরোধ করেন ওই মহিলারা। ঘন্টাখানেক পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।

বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূল ওই নেতাকে নির্বাচনের বিষয়ে মাথা ঘামাতে বারণ করেছিল। উনি তা শোনেননি। সেই আক্রোশেই হামলা করা হল।’’ তৃণমূলের ময়ূরেশ্বর ২ ব্লক সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্র বলেন, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে রাজনৈতিক রঙ লাগানো হচ্ছে৷’’

পুলিশ জানায়, এখনও এ নিয়ে কোনও অভিযোগ করা হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement