—ফাইল চিত্র।
দফায় দফায় আসছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর মতো এত বার না হলেও বাংলায় নজর দিচ্ছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও। আবার প্রথম পর্যায়ে গোটা উত্তরবঙ্গ চষে ফেলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভোটের এই উত্তাপের আঁচ এ বার আর পাম অ্যাভিনিউয়ের এক তলার ফ্ল্যাটে ঢুকছে না। গৃহকর্তা তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটের আগে যাদবপুরের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীকে নিয়ে রোড-শো করেছিলেন, যাতে ভেঙে পড়ে ভিড়। আসন সমঝোতা করেও সিপিএমের কোনও পলিটব্যুরো সদস্য যখন কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে যাচ্ছেন না, পার্ক সার্কাস ময়দানে সে বার রাহুলের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু এখন? ঘরের মধ্যে সামান্য হাঁটাচলা ছাড়া বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁর মুখদর্শন প্রায় বন্ধই!
সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখার পরে এই প্রথম একটা আস্ত নির্বাচন থেকে দূরে থাকছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মনের জোরে দু’মাস আগে ব্রিগেডের সমাবেশে গিয়ে গাড়িতেই বসেছিলেন। কিন্তু বক্তৃতা করার জন্য মঞ্চে উঠতে না পারলে নির্বাচনী সভায় যাওয়ার মানে হয় না। জেলা থেকে এ বারও সভায় বক্তা হিসেবে চেয়ে আমন্ত্রণ এসেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। পাম অ্যাভিনিউ থেকে তার কোনওটাতেই সম্মতি আসছে না।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মতোই এ বার ভরা ভোটের বাজারে ঘরবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিএম নেতা গৌতম দেব, সিপিআইয়ের প্রাক্তন সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। শরীরই এ বার তাঁদের কাবু করে ফেলেছে। মোদী- রাহুল- মমতা যত নির্বাচনের পরিসরে চেপে বসছেন, বাম কর্মী-সমর্থকদের আফশোস তত বাড়ছে! এ রাজ্যে প্রচার করতে সীতারাম ইয়েচুরি, মানিক সরকার, প্রকাশ কারাটদের আসার কথা। কিন্তু এখনও বাম মহলে তাঁদের চেয়ে বুদ্ধ-গৌতমের চাহিদা অনেক বেশি। দল চেষ্টা করছে বুদ্ধবাবুকে দিয়ে একটা অন্তত লিখিত আবেদন করানোর।
বসিরহাটে এ বার প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইয়ের সর্বভারতীয় নেতা পল্লব সেনগুপ্ত। দলের নেতারা চেয়েছিলেন, সেখানে অন্তত এক বার গুরুদাসবাবুকে নিয়ে যেতে। কিন্তু চেতলার বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে ভূপেশ গুপ্ত ভবনে আসা ছাড়া এক কালের দাপুটে সাংসদের আর বিশেষ গতিবিধি নেই। তাঁর কথায়, ‘‘বয়সটা ৮৫ হয়ে গেল! ভোটের সময়ে বসে থাকা কঠিন। কিন্তু এ বার বুদ্ধের মতো আমিও আর পেরে উঠলাম না!’’ হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার নিয়ে বিভ্রাটের পরে চেতলার ঠিকানাতেই আরও বেশি করে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছেন শ্রমিক নেতা।
বুদ্ধ-গুরুদাসদের তুলনায় বয়সে অনেক পিছিয়ে গৌতমবাবু। কিন্তু তাঁরও শরীর বশে নেই। কিছু দিন আগে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভাঙার পরে অবস্থা আরও সঙ্গিন। রাজনীতির হইচই থেকে দূরে আপাতত নিউ টাউনে থাকেন। তবে ভোটের মরসুমে বেরোতে না পারার যন্ত্রণা আছে ষোলো আনা। দলের নেতাদের গৌতমবাবু বলেছেন, হলের মধ্যে কর্মিসভা জাতীয় কিছু অনুষ্ঠানে অন্তত যেতে চান। আফশোস নিয়েই তিনি বলছেন, ‘‘সারদা, সম্পত্তি, ডেলোর মিটিং— যা যা বলেছিলাম, সবই তো এখন চলছে! এখন সবাই বলছে।’’