শান্তনুকে দেখতে এসেছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
প্রচারে বেরিয়ে পথ দুর্ঘটনায় জখম হলেন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর-সহ চারজন। শনিবার বেলা ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা থানার হাঁসপুর বাজার এলাকায় জলেশ্বর-হরিণঘাটা সড়কে।
বিজেপির দাবি, ঘটনার পিছনে তৃণমূলের অন্তর্ঘাত রয়েছে। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে জখম প্রার্থীকে দেখতে এসেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।’’ বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি জানান। পরে বলেন, ‘‘যে গাড়িটি শান্তনুর গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে, সেটি সরকারি গাড়ি ছিল। এটা নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি সাজানো ঘটনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমরা কমিশনকে জানিয়েছি। তাঁরা জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট চাইছেন।’’
জ্যোতিপ্রিয়র প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই কথার উত্তর দেব না। এ রাজ্য থেকে ওঁরা জিরো হয়ে যাবেন বুঝতে পেরে উল্টোপাল্টা বলছেন।’’ ঘটনার পিছনে বিজেপির দলীয় কোন্দল রয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ জ্যোতিপ্রিয়র। বনগাঁর সাংসদ মমতা ঠাকুরের কথায়, ‘‘শান্তনু আগেও মিথ্যে কথা বলেছেন। দুর্ঘটনা নিয়েও মিথ্যা বলছেন।’’
ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন দফায় দফায় পথ অবরোধ করেন। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। এসডিপিও বলেন, ‘‘অবরোধকারীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। পুলিশ কর্মীদের শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ কল্যাণীতে প্রচারে যাবেন বলে ঠাকুরনগরের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শান্তনু। সঙ্গে আরও চারটি গাড়িতে ছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, হাঁসপুর বাজারের কাছে উল্টো দিক থেকে আসা একটি গাড়ি শান্তনুর গাড়িতে ধাক্কা মারে। গাড়িতে ‘পুলিশ অন ইলেকশন ডিউটি’ লেখা স্টিকার সাঁটা ছিল। চালক একাই ছিলেন বলে জেনেছে পুলিশ। শান্তনু-সহ জখম চারজনকে বনগাঁ হাসপাতালে আনেন কর্মীরা। শান্তনু মাথায় চোট পেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসকেরা। তাঁকে এইচডিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে। শান্তনুকে কলকাতার নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৈলাস। জখম জয়ন্ত বিশ্বাস, সুখেন গাইন, গোপাল বিশ্বাসও চিকিৎসাধীন। সুখেন শান্তনুর পারিবারিক চিকিৎসক। জয়ন্ত গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ‘‘যে গাড়িটি ধাক্কা মেরেছে বলে অভিযোগ, সেটি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল। যে গাড়িতে ধাক্কা লেগেছে, সেটির রেজিস্ট্রেশন উত্তরপ্রদেশের। এখানে কী ভাবে এল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
এ দিকে, প্রার্থীর আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গাইঘাটার ঘোঁজা এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়। পুলিশ গেলে তাদের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ অবরোধ তোলে। কিছুক্ষণ অবরোধ হয় বনগাঁর বাটারমোড়ে। যশোর রোড এবং রেটপাড়া মোড় এলাকায় বনগাঁ-চাকদহ সড়কও অবরুদ্ধ করে দেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। ঠাকুরনগরে রেল অবরোধ হয়। বনগাঁ মহকুমা জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল করে বিজেপি।