বিরবাহা সরে যান, চাইছে ‘সমাজ’

দোলের দিন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা মাঝি পারগানা মহলের বৈঠক হয় ঝাড়গ্রামের বেতকুন্দরি মাঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০৩:২১
Share:

বীরবাহা সরেন। —ফাইল চিত্র

তাঁর ইস্তফার দাবি আগেই উঠেছিল। এ বার আদিবাসী সংগঠনের নেতা রবিন টুডুর স্ত্রী বিরবাহা সরেন যাতে তৃণমূলের প্রার্থিপদ ছেড়ে দেন, সেই দাবি উঠল আদিবাসী সমাজ থেকেই।

Advertisement

দোলের দিন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা মাঝি পারগানা মহলের বৈঠক হয় ঝাড়গ্রামের বেতকুন্দরি মাঠে। সেখানে ছিলেন রবিন ও সংগঠনের সর্বভারতীয় সুপ্রিমো ‘দিশম পারগানা’ নিত্যানন্দ হেমব্রম। নিত্যানন্দ জানান, আদিবাসীদের উন্নয়ন ও বিভিন্ন দাবিদাওয়ার প্রেক্ষিতেই রবিনের স্ত্রী বিরবাহা সরেনকে শাসকদলের প্রার্থী করার ব্যাপারে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তবে রবিনের ইস্তফার দাবিতে অনড় আদিবাসী সংগঠনের একাংশ। তাঁদের দাবি, যদি রবিনের স্ত্রী শাসকদলের হয়ে ভোটে লড়েন, তাহলে রবিনকে ‘পাগড়ি’ খুলতে হবে। অর্থাৎ অবিভক্ত মেদিনীপুর ‘জেলা পারগানা’র পদ রবিনকে ছাড়তে হবে। তা নাহলে তাঁর স্ত্রীকে ভোটের ময়দান থেকে সরতে হবে। সংগঠনের একাংশের আবার বক্তব্য, রবিন ইস্তফা দিলেও সামাজিক অনুশাসনে তাঁর স্ত্রী রাজনৈতিক দলের হয়ে ভোটে লড়তে পারবেন না।

কলকাতা জেলার পারগানা দেবদুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘পারগানা-র স্ত্রীও সমাজে ‘পারগানা আয়ো’ হিসেবে পরিচিত হন। তাঁরাও সরসরি রাজনীতি করতে পারেন না। সমাজিক নিয়ম অনুযায়ী রবিন টুডু পারগানা পদ থেকে সরে গেলেও তাঁর স্ত্রী রাজনীতি করতে পারবেন না।’’ বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ছিলেন সংগঠনের রাজ্যস্তরের সবোর্চ্চ সামাজিক নেতা ‘পনত পারগানা’ বাদল কিস্কু। তিনি বলেন, ‘‘রবিন টুডুর ও বিরবাহা সরেনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

Advertisement

সম্প্রতি রবিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে গোপীবল্লভপুরের ছাতিনাশোলে দু’দিনের সম্মেলন করেছি‌লেন পারগানা মহলের ঝাড়গ্রাম তল্লাট (মহকুমা)-এর প্রতিনিধিরা। সংগঠনের এক প্রতিনিধি প্রশ্ন তোলেন, এতদিন ধরে আদিবাসীদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে নানা আন্দোলন হয়েছে। এখন রবিনের স্ত্রী তৃণমূলের প্রার্থী। তাহলে এই সব আন্দোলন কি বিশেষ রাজনৈতিক স্বার্থে করা হয়েছিল!

বিরবাহা তৃণমূল প্রার্থী হওয়ায় প্রকাশ্যেই নিত্যানন্দ ও রবিনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পারগানা মহলের কিছু প্রতিনিধি। তাঁদের অভিযোগ, সামাজিক সংগঠনকে কলুষিত করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার একাংশ নেতা জানিয়ে দেন, তাঁরা সংগঠনে রাজনীতিকরণ মানবেন না। এ নিয়ে বাদানুবাদও হয়। শেষ পর্যন্ত সমাধান সূত্র ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

রবিনের অবশ্য সাফ কথা, ‘‘বিরবাহা প্রার্থী থাকছেন। আমিও সামাজিক পদে থাকছি।’’ আর ‘দিশম পারগানা’ নিত্যানন্দের বক্তব্য, ‘‘অনেক কথাই বলা হচ্ছে। আগে সিদ্ধান্ত হোক।’’

তবে তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সরেনকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। শুক্রবার সংগঠনের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি স্বপন শবর এক লিখিত বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন। স্বপন বলেন, ‘‘বিরবাহা সরেনের প্রতি আমাদের ভরসা রয়েছে। উনি জিতলে সংসদে সব আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য সরব হবেন।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement