সংগ্রহ: বাঁকুড়ার মাচানতলায় তহবিল সংগ্রহ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
দাম কেটে খদ্দেরকে বাকি টাকা ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন পোশাক বিক্রেতা। ‘‘ওই টাকা এখানে দিন’’— বলে বালতি বাড়িয়ে দেন সাদা ধুতি, সাদা পাজ্ঞাবী পরা সাদা মাথার এক ব্যক্তি। তাঁকে চিনতে পেরেই চমকে উঠেছিলেন ক্রেতা-বিক্রেতা দু’জনেই। সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রবীণ বলে ওঠেন, ‘‘ভোটে লড়তে হবে। তাই আপনাদের কাছে টাকা নিতে এসেছি।’’
রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে শনিবার এমন বর্ণময় ভূমিকায় বাঁকুড়া শহরের মাচানতলায় চৈত্রসেলের বাজারে নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহে ঘুরতে দেখা গেল। কখনও কোনও ভিড়ে ঠাসা দোকানে ঢুকে তিনি বালতি বাড়িয়ে বলে ওঠেন, ‘‘আমি কিছু কিনতে আসিনি। টাকা চাই, টাকা। ভোটে লড়তে হবে আমাদের।’’ কখনও বা কেনাকাটির মধ্যে ছোট শিশুকে কাছে ডেকে আদর করে বলেছেন, ‘‘তোর মাকে বল, আমাদের কিছু টাকা দিতে।’’
তাঁর এমন আবদারে ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে পথচারী প্রথমে অপ্রস্তুত হয়েছেন। তারপরেই হেসে পকেট ঘেঁটে, ওয়ালেট হাতড়ে তুলে দিয়েছেন টাকা। বিমানবাবুকে রাস্তায় দেখে অনেকেই এগিয়ে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করেন। মাথায় হাত দিয়ে তাঁদের আশির্বাদ করেন বিমানবাবু। সেই সঙ্গে দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আবেদনও জানান তিনি। অনেকে আবার বিমানবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে নিজস্বীও তোলেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
একটি ছোট্ট মেয়ে সামনে পড়ে যাওয়ায় হাত ধরে তাঁকে থামিয়ে দেন বিমানবাবু। তাঁকে দাঁড়াতে বলে হাতড়াতে থাকেন পাঞ্জাবীর পকেট। সেখান থেকে কী বার হয়, কী বার হয় অপেক্ষায় যখন সবাই, তখন পাশে দাঁড়ানো জেলা সিপিএম নেতা প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলে ওঠেন, ‘‘বিমানদা ছোটদের জন্য পকেটে চকোলেট রাখেন।’’
কিন্তু, বিমানবাবু পকেট থেকে খালি হাত বেরিয়ে আসে। তখন সঙ্গী নেতা-কর্মীরা বলে ওঠেন, ‘‘ফুরিয়ে গিয়েছে। ওকে আমরা পরে চকোলেট কিনে দেব।’’
নির্বাচন হোক বা দলের কর্মসূচি— তহবিল সংগ্রহে এখনও পথে নামতে দু’বার ভাবেন না বর্ষীয়ান বিমানবাবু। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের ইটাহারেও তিনি তহবিল সংগ্রহের জন্য পথে নেমেছিলেন। দলীয় কর্মীরা যখন তহবিল সংগ্রহে পথে নামতে ওজর আপত্তি তোলেন, সে সময়ে নিজের উদাহরণ তুলে ধরেন বিমানবাবু।
বাঁকুড়া কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী অমিয় পাত্রকে নিয়ে বিমানবাবু বেশ কিছুক্ষণ ধরে শহরের সুভাষ রোড এলাকার তহবিল সংগ্রহ করেন। তাঁকে দেখে উচ্ছ্বসিত দলীয় কর্মীরাও। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এত বড় মাপের এক রাজ্য নেতা দোকানে এসে পড়ায় হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। সাধ্যমতো তাঁর বালতিতে টাকাও দিয়েছি। যে দলই সমর্থন করি না কেন, বিমানবাবুকে কাছে পেয়ে আমরা খুশি।’’