Lok Sabha Election 2019

ফুরফুরে মুনমুন, ম্যাপে মন বাবুলের

২০১৪-র ভোটে হারের পরে এ বারে আসানসোল কেন্দ্রে সুচিত্রা কন্যাকে নিয়ে এসে জিততে চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৮
Share:

প্রতিদ্বন্দ্বী: ভোটের আগের দিনটা হাল্কা মেজাজেই কাটালেন আসানসোলের দুই প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় এবং মুনমুন সেন। ছবি: সুমন বল্লভ।

রবিবার রাত তখন প্রায় পৌনে ১০টা। পরীক্ষার আগের রাতে এই সময় দরজা এঁটে থাকারই কথা। তবে গড়পড়তা পরীক্ষার্থী যা করেন, তিনি সে পথে নেই। রাত ১০টা নাগাদ হাইওয়ে লাগোয়া তাঁর বর্তমান আস্তানার বসার জায়গায় তিনি শুধু নামলেনই না, খোশগল্প জুড়লেন ব্রেকফাস্ট, শপিং মলে ঘোরা আর বিউটিপার্লারে সারা দিনের সময় কাটানো নিয়ে।

Advertisement

তিনি মুনমুন সেন। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, রাত পোহালেই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়তে চলেছেন তিনি। বিরোধী শিবির যেখানে খাতা-কলম হাতে বসে ভোটের দিনের পরিকল্পনা করছে, তিনি তখন গল্প করতে বসে বলে দিলেন, ‘‘অনেক দিন বাদে স্বামীর সঙ্গে একটা দিন কাটানোর সময় পেয়েছিলাম আজ। চুটিয়ে মজা করেছি। কাল কী হবে কাল ভাবা যাবে!’’ ভোট রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে তিনি এ দিন বড়ই ঘরোয়া!

২০১৪-র ভোটে আসানসোলে হারের পরে এ বারে সুচিত্রা কন্যাকে নিয়ে এসে জিততে চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চেষ্টায় কসুর করেননি প্রার্থী নিজেও। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই আসানসোলে পড়ে থাকা মুনমুন বললেন, ‘‘এতগুলো দিন এখানে কেটে গেল। হারি বা জিতি, এখানকার মানুষ আমায় মনে রাখবেন।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘বিজেপি ঝামেলা করার চেষ্টা করবে। সাবধানে ভোট দিতে যান। যা-ই হোক, রক্ত যেন না ঝরে!’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঝামেলার আশঙ্কার কথা শোনালেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ও। মহিষীলা কলোনি এলাকার অ্যাপার্টমেন্টে তিনি রবিবার সন্ধে থেকে খাতা-পেন হাতে বসেছেন। তাঁকে ঘিরে সহকর্মীর বৃত্ত। মাঝেমধ্যেই চোখ রাখছেন টেবিলের কাচে ঢাকা, এলাকার মানচিত্রের দিকে। সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে ‘রুট-ম্যাপ’ ঠিক করার মধ্যেই বললেন, ‘‘ঝামেলা করবে তৃণমূল। আমি নিজে গাড়ি চালাব কাল। যেখানে মারতে আসবে, আমি যাব। ভোটারদের মারতে হলে আগে আমায় মারতে হবে।’’ কথা শেষ করতে না করতেই ফিরে গেলেন হাতে বাঁধা কাঠের পুঁতির ‘ব্যান্ড’-এর পরিচর্যায়। এক সহকর্মীকে বললেন, ‘‘কাল হাতে এটা থাকতেই হবে! ভাল করে বাঁধো।’’ কোনও সংস্কার? বাবুল বললেন, ‘‘খুব কাছের এক দাদার দেওয়া। সব সময় সঙ্গে রাখি। বাঁধুনিটাই ঠিক হচ্ছে না।’’
আসানসোলে বিজেপি’র সংগঠনের বাঁধুনি নিয়েও নাকি তিনি বড়ই চিন্তিত! টিভিতে বিদেশি ফুটবল চ্যানেলের খোঁজে ব্যস্ত বাবুল বললেন, ‘‘আমি সব সময় রিল্যাক্সড। কো‌নও চিন্তা নেই।’’ ‘রুট-ম্যাপ’ সাজিয়ে নিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন বিদায়ী সাংসদ। ভোট নিয়ে নিজের গাওয়া গান সাউন্ড বক্সে চালিয়ে নাচ শুরু হল বাবা-মেয়ের। দূরে বসে তাঁর গোটা পরিবার তখন দর্শক। নাচ শেষে তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন, ‘‘দুপুরে মাংস-ভাত খেয়ে ঘুম দিয়েছি, আর রাতে মেয়ের সঙ্গে নাচটাও হয়ে গেল। কাল দেখি কে আটকায়!’’

মনে পড়ল সন্ধ্যায় আসানসোলের বাম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ও বলছিলেন, ‘‘ঝামেলা না করলে আমাকে দেখি কে হারায়!’’ এলাকার বহুদিনের বাম নেতা এ-ও বলেছিলেন, ‘‘আমিই সম্ভবত এখানকার একমাত্র ভোটার প্রার্থী। বাকি সবই তো বাইরের!’’ রাতের আড্ডায় মুনমুন কিন্তু বললেন, ‘‘কে বলে আমি বাইরের? আমি এখানকার মেয়ে। একটাই আফশোস, প্রচারের সময়কার এই সুন্দর সময়টা চলে গেল!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement