আগে তিনি দাবি করেছিলেন, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে অন্তত তিন লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতবে তৃণমূল। কিন্তু, বুধবার রামপুরহাটের এক জনসভায় দলের ভোট-প্রাপ্তির যে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, তা শুনে চোখ কপালে উঠেছে দলেরই ছোট-মাঝারি নেতা-কর্মীদের!
কী চেয়েছেন অনুব্রত? তাঁর ইচ্ছা, বীরভূম আসন থেকে যেন ১২ লক্ষ ভোট আসে তাঁদের ঝুলিতে। এর জন্য ‘অন্য রকম পদ্ধতি’ ব্যবহারের নিদান দিয়েছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সিরিঞ্জ তো ছোট ও বড়, দু’রকমই হয়! রোগ সারাতে গেলে যখন যা প্রয়োজন, তা-ই প্রয়োগ করতে হবে।’’
গত বছর সেপ্টেম্বরে জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পরে এক সভায় অনুব্রত বলেছিলেন, ‘‘সামনে লোকসভা নির্বাচন। আপনারা সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন তো। আড়াই থেকে তিন লক্ষ ভোটে জিততে হবে বোলপুর আসন। বীরভূম লোকসভা আসনে জিততে হবে দেড় থেকে দু’লক্ষ ভোটে। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে।’’ তার পরে বিভিন্ন সভায় বীরভূম আসন থেকে কখনও দু’লক্ষ, কখনও আড়াই লক্ষ, কখনও বা তিন লক্ষ ভোটে জেতার কথা শোনা গিয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতির মুখে। তা বলে ১২ লক্ষ ভোট পেতেই হবে দলকে—এমন ফরমান আগে কখনও দেননি। বুধবার সেটাই কর্মীদের উদ্দেশে স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনুব্রত। এ দিন রামপুরহাট থানার চাকপাড়া গ্রামে দলীয় কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে সাড়ে ১৭ লক্ষ ভোটার। তার মধ্যে ১৪ লক্ষ ‘পোল’ করতে হবে। আর দলের অনুকুলে ১২ লক্ষ ভোট চাই।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বীরভূম কেন্দ্রে এ বার ভোটার সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮২২। প্রায় ১৭ লক্ষ। এর অর্থ, বাকি বিরোধী প্রার্থীদের জন্য অনুব্রত নির্বাচনের আগেই স্রেফ পাঁচ লক্ষ ভোট বরাদ্দ করে দিলেন। অর্থাৎ জয়ের ব্যবধান হবে ন্যূনতম সাত লক্ষ! বাম জমানায় একটা সময় বিপুল ব্যবধানে জেতার ঐতিহ্য তৈরি করেছিল সিপিএমও। আরামবাগে ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী, প্রয়াত অনিল বসু প্রায় ছয় লক্ষ ভোটে জিতে রেকর্ড করেছিলেন। এ রাজ্যে সেই রেকর্ড আজও অক্ষত। কেশপুর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে এমনই বিপুল ভোটে জেতার রেকর্ড গড়েছিলেন সিপিএমের নন্দরানি ডল। এ দিন সভার পরে তৃণমূলের এক জেলা নেতা মজা করে বললেন, ‘‘কেষ্টদার (অনুব্রত) কথা সত্যি মানতে হলে, সিপিএমের সেই রেকর্ডও মুছে যাবে!’’ রেকর্ড গড়ার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশও এ দিন দিয়েছেন অনুব্রত। কী ভাবে এই ব্যবধান সম্ভব, সেই কৌশল তাঁদের জানা আছে বলে দাবি করেছেন অনুব্রত। সভার পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘১২ লক্ষ ভোট পাওয়ার জন্য অন্য রকম পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। সেটা কী করে করতে হবে, তা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’’
জেলা তৃণমূলের সভাপতির এমন ফরমানে আসন্ন ভোটে গা-জোয়ারির আশঙ্কা দেখছেন বিরোধীরা বীরভূম কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, ‘‘এ ধরনের মন্তব্য অবাধ নির্বাচনের পরিপন্থী। ভয় দেখানো ও হুমকি দেওয়ার কৌশল নিয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত ভোট করিয়েছিল। সে বার ভোটই হয়নি বীরভূমে। কিন্তু, এ বার মানুষ তৈরি হয়ে আছেন। আমাদের বিশ্বাস, তৃণমূল সেই একই কৌশল নিতে গেলে মানুষ প্রতিরোধ করবে।’’ বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘উনি ভুলভাল বকছেন! ওদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে, সেটা বুঝতে পেরেই এমন আকাশকুসুম কল্পনা করছেন। ভোটের ফলে ওঁর সব বুলি চুপসে যাবে!’’
সাত লক্ষের ব্যবধান শুনে চমকে গিয়েছেন খোদ বীরভূমের বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারও তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এত দিন কেষ্টদা দুই-তিন বলছিলেন। আমার প্রতি ভালবাসাটা বোধহয় বেড়ে গিয়েছে। তবে, যদি সত্যিই সাত লক্ষের ব্যবধান হয়, আমার চেয়ে খুশি কেউ হবে না।’’