অমিয় পাত্র। —নিজস্ব চিত্র।
মুনমুন সেনকে সরিয়ে তৃণমূল বর্ষীয়ান নেতা, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে। বিজেপিও কাকে প্রার্থী করে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম অমিয় পাত্রকে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করে লড়াইয়ের অন্য মাত্রা এনে দিল। মঙ্গলবার রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয়বাবুর নাম ঘোষণা করেন। তারপরেই ওই কেন্দ্রের লড়াই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে গত সপ্তাহে বামফ্রন্ট রাজ্যের ২৫টি কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। তাতে জেলার অন্য কেন্দ্র বিষ্ণুপুরের সিপিএম প্রার্থী সুনীল খাঁয়ের নাম ঘোষণা করা হলেও, বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম জানানো হয়নি। ওই কেন্দ্র নিয়ে কংগ্রেসেরও বিশেষ দাবি ছিল না। তাহলে কেন তখন বাঁকুড়ার প্রার্থীর নাম জানানো হয়নি?
সিপিএম সূত্রের খবর, গোড়াতেই অমিয়বাবুকে ভোটে নামানোতে সায় ছিল না নেতৃত্বের। ওই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে বিবেচনায় ছিল বাঁকুড়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদারের নাম। কিন্তু, তৃণমূল সুব্রতবাবুকে প্রার্থী করায় তখন নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। তারপরেই মঙ্গলবার চূড়ান্ত ভাবে অমিয়বাবুর নাম ঘোষণা করেন বিমানবাবু।
রাজ্য রাজনীতিতে অমিয়বাবু এক জন দক্ষ সংগঠক বলেই পরিচিত। দীর্ঘ বাম আমলে বাঁকুড়া জেলায় সিপিএমের একচ্ছত্র ক্ষমতা ধরে রাখার পিছনে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাকেই অনেকে অন্যতম বড় কারণ হিসাবে মনে করেন। এমনকি, ২০১১ সালে রাজ্যে যখন পরিবর্তনের ঝড় উঠেছিল, তখনও জঙ্গলমহলে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল সিপিএম।
বর্তমানে অবশ্য পরিস্থিতি অন্যরকম। তাই অমিয়বাবুকে তুরুপের তাস করছে বামফ্রন্ট। নির্বাচনে অবশ্য আগেও লড়েছেন অমিয়বাবু। তিনি দু’বার তালড্যাংরা বিধানসভার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর ১৯৯৫ সাল থেকে টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৩ সালে তিনি সিপিএমের রাজ্যসম্পাদকমণ্ডলীর এবং ২০১৮ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।
পালাবদলের পরে হারানো জমি ফিরে পেতে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিজের গড় তালড্যাংরায় ফের ভোটে দাঁড়ান অমিয়বাবু। তবে, তৃণমূল প্রার্থী সমীর চক্রবর্তীর কাছে তিনি পরাজিত হন। ওই বিধানসভা ভোটে অবশ্য বড়জোড়া, সোনামুখীতে সিপিএম জেতে। ছাতনা কেন্দ্রে জেতে আরএসপি। এ বার অমিয়বাবুর পক্ষে কতটা ভোট আসে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
অমিয়বাবু বলেন, “লড়াইয়ের ময়দানে আমরা রয়েছি। গত পাঁচ বছর ধরে মানুষ যে সব সমস্যার সঙ্গে ঝুঁজছেন, তা সামনে রেখেই ভোট হবে।” যদিও তৃণমূল প্রার্থী সুব্রতবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘সিপিএমকে আগেই ছুঁড়ে ফেলেছেন সাধারণ মানুষ। তাই ওদের কে প্রার্থী হলেন, তা নিয়ে ভাবছি না।’’