গোলমালের সময়ে গেল কোথায় ভোটের ফৌজ? প্রশ্ন বিরোধীদের

আসানসোল, বর্ধমান, বীরভূম, বহরমপুরের একাধিক ঘটনা তুলে ধরে বিরোধীরা যখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার উদাহরণ দিচ্ছে, তৃণমূল তখন সরব হয়েছে পাড়ুই ও দুবরাজপুরের দু’টি বুথে বাহিনীর গুলি চালানো নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৫
Share:

প্রাণভয়ে হাতজোড় করছেন তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত পরিবারের মহিলা। পাশে মেয়ে। সোমবার নানুরের বন্দর গ্রামে। ছবি: কল্যাণ আচার্য

রাজ্যে প্রথম তিন দফার ভোটেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ ছিল। তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছিল নির্বাচন কমিশন। কার্যক্ষেত্রে সোমবার চতুর্থ দফার ভোটের দিন সেই বাহিনীকে দেখা গেল না গোলমালের সময়ে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলল, কমিশনের খাতায় ৯৬% বুথে যে বাহিনী রাখা হয়েছিল, তারা গোলমালের সময়ে গেল কোথায়? আবার রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল সরব হল কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অতি সক্রিয়তা’র অভিযোগে।

Advertisement

মোট ৮টি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটে নানা জায়গাতেই বুথ দখল, ছাপ্পা, সংঘর্ষ, ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। কোথাও প্রার্থী নিজে গিয়ে, কোথাও স্থানীয় বাসিন্দারা রুখে দাঁড়িয়ে ভোট লুট আটকানোর চেষ্টা করেছেন। নদিয়ার হাঁসখালিতে ভোট দিয়ে ফেরার পথে বোমায় গুরুতর জখম হয়েছেন এক দম্পতি।

মোট ৫৬১ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন হলেও অশান্তি মোকাবিলায় তাদের কেন সে ভাবে সক্রিয় দেখা গেল না, তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি কমিশনের তরফে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব বলেছেন, ‘‘কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট মোটের উপরে শান্তিপূর্ণই হয়েছে।’’ বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৬.৪৪%। আফতাব আবার জানিয়েছেন, পঞ্চম দফার ভোটের দিন ৭টি কেন্দ্রের সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।

Advertisement

আধাসেনার সামনে এক খুদে। চাপড়ার পাথুরিয়ায় একটি বুথে। সোমবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

আসানসোল, বর্ধমান, বীরভূম, বহরমপুরের একাধিক ঘটনা তুলে ধরে বিরোধীরা যখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার উদাহরণ দিচ্ছে, তৃণমূল তখন সরব হয়েছে পাড়ুই ও দুবরাজপুরের দু’টি বুথে বাহিনীর গুলি চালানো নিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এত বড় সাহস যে, বুথের ভিতরে ঢুকে সিআরপিএফ গুলি চালিয়েছে! তাদের তো বুথের বাইরে থাকার কথা! বুথে ঢুকে লাঠি চালানোর ক্ষমতাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নেই।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাহিনীর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘অশান্তি দেখেও রাজ্য পুলিশ পুরো চুপ, আধা-সামরিক বাহিনী আধা চুপ! তবু অনেক জায়গায় মানুষ এগিয়ে এসে ভোট দিয়েছেন। মানুষের অধিকারে বাধা দেওয়ার যত চেষ্টা হবে, মানুষই তত প্রতিরোধ করবেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক এবং সিইও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কমিশন ৯৬% বুথের জন্য বাহিনী দিচ্ছে অথচ তারা কাজে আসছে না! প্রশাসন কী ভাবে কমিশনের কথা অগ্রাহ্য করে কাজ করে যাচ্ছে?’’ আসানসোলে গিয়ে নায়েক বলেছিলেন, সেখানে সব বুথে বাহিনী থাকবে। কিন্তু দিনের শেষে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় আমি হতাশ। যা ভেবেছিলাম, এদের ভূমিকা তার চেয়ে অনেক খারাপ।’’

আক্রান্ত: মার খেয়েও ভোটের পথে দৃষ্টিহীন সন্ন্যাসী লোহার। ছবি: কল্যাণ আচার্য

বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাসের গাড়ি ভাঙচুর করে তাঁকে নিগ্রহের অভিযোগ এনেছে বিজেপি। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, প্রার্থী বহিরাগতদের নিয়ে বুথে ঢুকেছিলেন। বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে ‘ছাপ্পা ভোট’ দেওয়ার অভিযোগে এক বহিরাগতকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। সেই ঘটনায় বহরমপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেছে প্রশাসন। অধীর বলেন, ‘‘ছাপ্পা হচ্ছে দেখে গিয়েছিলাম, যা প্রশাসনেরই করা উচিত ছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement