প্রচারে: তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতোর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: সুজিত মাহাতো
কার বাড়িতে কী খাওয়া হচ্ছে, সেই খবর নরেন্দ্র মোদীর কাছে থাকে। কিন্তু জঙ্গিরা বিস্ফোরক নিয়ে সীমান্ত পার করে সেনাদের মারতে ঢুকে পড়েছে, সেই খবর তিনি রাখেন না। পুরুলিয়া থেকে প্রধানমন্ত্রীকে এ ভাবেই কটাক্ষ করলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো এ বারও প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর সমর্থনে শুক্রবার পুরুলিয়া ২ ব্লকের ভাঙরা নবকুঞ্জ ময়দানে সভা করতে গিয়েছিলেন অভিষেক। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘কার বাড়িতে কাতলা মাছ, কার বাড়িতে মুরগির মাংস, আর কার পাতে গরুর মাংস সেই খবর নরেন্দ্র মোদীর কাছে যায়। কিন্তু কাশ্মীরের সীমান্ত পার করে জঙ্গীরা সাড়ে তিনশো কেজি আরডিএক্স আমাদের দেশে ঢুকিয়ে ৪২ জন সেনাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে যায়, সে খবর নরেন্দ্র মোদীর কাছে থাকে না।’’
বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এ সব বলে কাকে ছোট করতে চান, সেটা ওঁরাই জানেন। আর সেনাদের মৃত্যুর পরে প্রধানমন্ত্রী কী পদক্ষেপ করেছেন সেটা পুরো বিশ্ব জানে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পুরুলিয়ার ওই নবকুঞ্জ ময়দানেই গত ফেব্রুয়ারিতে সভা করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সেই সভার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। তখন চাপানউতোরও হয়। এ দিনের সভায় যোগীর নাম করে হিন্দুত্বের প্রশ্নে বিজেপির সমালোচনা করেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপনারা খালি রামমন্দিরের নামে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে ভারতবর্ষকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছেন। ২০১৬ সালে নোটবন্দি, ২০১৭ সালে ট্যাক্সবন্দি, ২০১৮ সালে রেল স্টেশনের নাম বদল। আর ২০১৯-এ বাংলার মানুষ এদের ক্ষমতাচ্যুত করে মোদী বদল করবে এই বিশ্বাস আমি রাখি।’’
গ্রাম সড়ক যোজনার নাম নিয়ে তর্জা ভোট প্রচারেও উঠে আসছে। বিজেপির অভিযোগ, রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’-র নাম বদল করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। প্রকল্পের অনেকটাই টাকা রাজ্য সরকারকে দিতে হয়। সেই কথা বলে তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করে, প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে বিজেপিই ফায়দা তুলতে চাইছে। এ দিন অভিষেক সেই প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
তিনি বলেন, ‘‘এদের গায়ে এত জ্বালা কেন? প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা এখন বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনা হয়েছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর যদি নিজের প্রচার করার দরকার পড়ত, তাহলে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা আমরা মুখ্যমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। এদের আপত্তি বাংলা নামটা নিয়ে। এরা বাংলা বিরোধী।’’ বিদ্যাসাগরবাবুর বক্তব্য, ‘‘বাংলাকে ওঁদের থেকে আমরা কোনও অংশে কম ভালবাসি না। কিন্তু প্রকল্পের নাম অন্য রাজ্য মানতে পারলে এই রাজ্যের সরকার কেন মানবে না? প্রধানমন্ত্রী তো মানুষের রায়েই নির্বাচিত।’’
পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি। সেই কথা বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না, এটা অহঙ্কার না আত্মতুষ্টি, না এটা সাংগঠনিক ব্যর্থতা? এটুকু জানি, ওরা পুরুলিয়ার মানুষকে বোকা ভাবে। পঞ্চায়েতে কয়েকটা আসন জিতে আজকে অশান্ত করতে চেয়েছে আমাদের এই পুরুলিয়াকে।’’ বিজেপির বিদ্যাসাগরবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘আমরা কাকে কখন প্রার্থী করব সেটা আমাদের সাংগঠনিক ব্যাপার। ওঁরা আতঙ্কে ভুগছেন, তাই এ সব বলছেন।’’