আবদুল করিম। বাঁদিকে আগের ছবি। ডানদিকে সাম্প্রতিক ছবি।
জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ(জেএমবি)-র এ রাজ্যের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক আবদুল করিম ওরফে বড় করিমকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদের সূতি থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আব্দুলকে।
এসটিএফের গোয়েন্দাদের দাবি, এই মূহুর্তে এই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের তিন শীর্ষ নেতার একজন করিম। সংগঠনের অর্থ জোগাড় থেকে বিস্ফোরক সরবরাহ এবং ‘লজিস্টিক’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল তাঁর। বর্তমানে তিনি সংগঠনের প্রধান সালাউদ্দিন সালেহিনের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে দলাই লামার বুদ্ধগয়া সফরের সময় সেখানে বিস্ফোরণের ছক কষে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পিছনে থাকা নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি। ততদিনে জেএমবি-র সংগঠন দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে এবং সালাউদ্দিন সালেহিন, জহিদুল ইসলাম-সহ শীর্ষ নেতারা ভারতে সংগঠন বিস্তার করা শুরু করেছে। খাগড়াগড়ের সঙ্গে সঙ্গে বেলডাঙা, বীরভূমের সমস্ত মডিউল ভেঙে যাওয়ায়, তারা নতুন নিয়োগ করা যুবকদের নিয়ে তৈরি করে ধূলিয়ান মডিউল।
আরও পড়ুন: নয়া আক্রান্ত দ্বিগুণ, ব্যস্ততা হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে
মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, সূতি-সহ জঙ্গিপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেই সংগঠন তৈরি হয়। ধূলিয়ান মডিউলকেই ব্যবহার করা হয় বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ধূলিয়ান মডিউলের অন্যতম চাঁই পয়গম্বর শেখ এবং জমিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। সেই সময় তল্লাশি চালাতে গিয়ে সামশেরগঞ্জে আবদুল করিমের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট-সহ বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক। কিন্ত গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় করিম। ধরা পড়ে মডিউলের আরও এক সদস্য ছোট করিম। এর পর বিভিন্ন সময়ে ধূলিয়ান মডিউলের বিভিন্ন সদস্য পাকড়াও হয়েছে। কিম্ত অধরা থেকে যায় বড় করিম।
গোয়েন্দাদের দাবি, এই দুই বছরে জেএমবি-র সংগঠনে অনেক পরিবর্তন হয়। জহিদুল ওরফে কওসরের সঙ্গে সালাউদ্দিনের আদর্শগত বিরোধ থেকে এদেশের জেএমবি সংগঠনেও আড়াআড়ি ভাগ তৈরি হয়। দক্ষিণ ভারত থেকে একে একে ধরা পড়ে কওসর এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা। গত বছরের গোড়ার দিকে সালাউদ্দিন তৈরি করে জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দ অর্থাৎ জেমবি-র ভারতীয় শাখা।
এসটিএফের গোয়েন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরে বড় করিম বাংলাদেশেও জেএমবি-র সালাউদ্দিন গোষ্ঠীর লোকজনদের সঙ্গে দেখা করেছে এবং বৈঠক করেছে। করিমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সালাউদ্দিন এবং বাংলাদেশে জেএমবির অন্য এক শীর্ষ নেতা মাস্টারের। এরা দু’জন ২০১৫ সালে করিমের বাড়িতেও থেকে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঘেঁষাঘেঁষি ট্রেনে, মাঝপথে নামা শ্রমিকদের নিয়ে ভয়
করিম বাংলাদেশের সংগঠনের একটি অংশের সঙ্গে সমন্বয় রাখছিল। এসটিএফের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে পাওয়া শীর্ষ এবং সক্রিয় জেএমবি নেতাদের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে করিমের নাম।”
গত প্রায় আড়াই বছর করিম কোথায় ছিল তা জানতে চাইলে ডিসি এসটিএফ অপরাজিতা রাই জানিয়েছেন,‘‘ আমরা সেই তথ্য জানার চেষ্টা করছি। এখনও করিম কিছু বলেনি। তবে এ টুকু জানা গিয়েছে, করিম এই মূহুর্তে সংগঠনের তৃতীয় শীর্ষ নেতা।” গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগেই মুর্শিদাবাদে ফেরে করিম। এই ক’বছর কেরল, তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়ে গা ঢাকা দিয়েছিল সে। সম্ভবত কোভিড আতঙ্কের জেরে বা লকডাউনে বিপাকে পড়ে সম্প্রতি নিজের এলাকায় ফেরেন করিম।” এক এসটিএফ কর্তার কথায়, ‘‘খবর পেয়ে আমরা প্রথমে সামশেরগঞ্জে করিমের বাড়িতে তল্লাশি চালাই। সেখানে সে ছিল না। আরও পাঁচটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সূতি থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে করিমকে পাকড়াও করা হয়েছে।” করিমের গ্রেফতারির পর গোয়েন্দাদের দাবি, সংগঠনের বাকি দুই নেতা সালাউদ্দিন এবং মিন্টু খানকে পাকড়াও করা সম্ভব হবে।
তবে গোয়েন্দাদের অনুমান, লকডাউনে কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফেরা শুরু করতেই বিপাকে পড়ে করিম। তাই ভিনরাজ্যের ডেরা থেকে ফিরে এসেছে করিম। তবে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। বাসে বা ট্রাকে করেও ফিরতে পারে, অনুমান গোয়েন্দাদের।