রাজ্য বাড়ানো হল লকডাউনের সময়সীমা।—ছবি পিটিআই।
করোনা মোকাবিলায় আরও এক মাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে লকডাউন। আমপানের (প্রকৃত উচ্চারণে উমপুন) ধ্বংসলীলা মোকাবিলায় গঠিত হচ্ছে সর্বদলীয় কমিটি। বুধবার নবান্নে সর্বদল বৈঠক সেরে এ কথাই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩১ জুলাই পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন জারি থাকবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ্যে লকডাউনের চলতি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩০ জুন। কিন্তু সর্বদল বৈঠকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আরও এক মাস লকডাউন চলবে। এই দফার লকডাউনে নতুন কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে না। যে সব বিধিনিষেধ এত দিন জারি ছিল, সেগুলোই বহাল থাকবে বলে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। লোকাল ট্রেন এবং মেট্রোরেল পরিষেবাও বন্ধ রাখা হবে বলে জানা যাচ্ছে।
আগের দফার মতো এ বারও কন্টেনমেন্ট এলাকাগুলিতেই মূলত কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকবে। অন্যান্য এলাকায় থাকবে সামাজিক দূরত্ব বিধি এবং নৈশকালীন বিধিনিষেধ। বাস, ট্যাক্সি, অটো-সহ নানা গণপরিহণের জন্য যে সব আচরণ বিধি বেঁধে দেওয়া হয়েছে, বহাল থাকবে সে সবও।
আরও পড়ুন: একতরফা ভাবে সংঘর্ষে উস্কানি দেয় ভারত, দাবি চিনের
এ দিনের সর্বদল বৈঠকে আরও একবার মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে, ত্রাণ বা ক্ষতিপূরণ থেকে কেউ বঞ্চিত হবেন না। প্রথমে লকডাউনের জেরে তৈরি হওয়া সঙ্কট, তার পরে ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলা— সব মিলিয়ে দুর্গত বহু মানুষ। তাঁদের সাহায্যার্থে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের যে সব প্রকল্প ঘোষণা করেছে সরকার, সে সব নিয়ে প্রবল দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে বিরোধী দলগুলি। মুখ্যমন্ত্রী আগেও একাধিক বার সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না বলে বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ কতটা হয়েছে, সে নিয়ে সংশয় যথেষ্টই। ফলে বুধবার নবান্নে বসে রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলকে আরও একবার আশ্বস্ত করতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
নবান্নে এ দিন বেলা ৩টে থেকে শুরু হয় সর্বদল বৈঠক। সরকারের তরফ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ছিলেন। বিধানসভার তরফ থেকে ছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিজেপির তরফ থেকে বৈঠকে যোগ দেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিধানসভার বিজেপি পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গা এবং রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। আর সিপিএম এবং কংগ্রেসের তরফ থেকে যোগ দিয়েছিলেন যথাক্রমে সূর্যকান্ত মিশ্র ও সুজন চক্রবর্তী এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য ও অসিত মিত্র। সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক, গোর্খা জনুমক্তি মোর্চা, এসইউসিআই, বহুজন সমাজ পার্টি, এনসিপি-র প্রতিনিধিরাও আমন্ত্রিত ছিলেন এ দিনের বৈঠকে।
আরও পড়ুন: মোদী-চিনফিং দেখা হচ্ছে নভেম্বরে, বৈঠক হবে কি?
বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে, বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করছেন তিনি। আমপানের (প্রকৃত উচ্চারণে উমপুন) জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সব এলাকা, সেই সব এলাকার ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ কী ভাবে হবে, তা খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
এ দিনের সর্বদল বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রাণ বা ক্ষতিপূরণ যাঁদের প্রাপ্য, তাঁদের কেউ যাদে বঞ্চিত না হন, তা সরকার নিশ্চিত করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। অনিয়মের অভিযোগ এলেই যে সরকার পদক্ষেপ করছে, সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত অথচ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না, তাঁদেরকে এ দিন বিডিও-র কাছে আবেদন জমা দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বিডিও অফিস ভাঙচুর বা অশান্তির আশ্রয় না নেওয়ার অনুরোধও করেছেন তিনি। গত কয়েক দিনে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণে অনিয়মের অভিযোগকে ঘিরে অশান্তি হয়েছে। অনিয়ম যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সচেষ্ট বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন। তাই অনিয়মের অভিযোগ থাকলে তা প্রশাসনিক কর্তার কাছে পৌঁছে দিতে বলেছেন।
সুন্দরবনের পরিস্থিতি নিয়েও এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। নদীবাঁধ ভেঙে বার বার প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এই পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানের জন্য সুন্দরবনে ঘিরে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি নীতি আয়োগকে অনুরোধ করবেন বলেও জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার সুবিধা যাতে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরাও পান, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলেও এ দিনের সর্বদল বৈঠকে স্থির হয়েছে।