Arbitration meeting

Arbitration Meeting: ট্রেনে পুরুষের পাশে বসায় ‘একঘরে’ মহিলা

নেলুয়া গ্রামের বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলার ছোট মেয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। মাথায় টিউমার হয়েছে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

ভীমপুর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৫
Share:

প্রতীকী চিত্র।

ট্রেনে তাঁর পাশে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল গ্রামেরই এক ব্যক্তিকে। এই ‘অপরাধে’ এক মহিলাকে সপরিবার একঘরে করে দিলেন গ্রামের সালিশি সভার প্রধানেরা! গত শনিবার রাতে নদিয়া জেলার ভীমপুর থানার নেলুয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

এই ‘তালিবানি’ নিদান দেওয়ার পাশাপাশি রবিবার সকালে গ্রামে তা প্রচারও করে দেওয়া হয়। ফতোয়া জারি করা হয় যে, ওই মহিলা বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেউ কথা বললে অথবা তাঁদের নিজের জমির উপর দিয়ে হাঁটতে দিলে বা জিনিস বিক্রি করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ফলে, সোমবার থেকে ওই পরিবারের সদস্যদের গ্রামের কোনও দোকানদার নুন পর্যন্ত বিক্রি করেননি। পাঁচটি শিশুকে নিয়ে বিপদে পড়েছে ওই পরিবার। ঘটনার কথা জানিয়ে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পালের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। তবে সুপারকে এ ব্যাপারে একাধিক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

নেলুয়া গ্রামের বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলার ছোট মেয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। মাথায় টিউমার হয়েছে। মাসে দু’বার চিকিৎসার জন্য তাকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে হয়। পরিবার সূত্রের খবর, গত ২০ অগস্ট তিনি মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় যাওয়ার জন্য কৃষ্ণনগর থেকে ট্রেনে ওঠেন। ঘটনাচক্রে তাঁর পাশে এসে বসেন গ্রামেরই এক ব্যক্তি। তাঁদের দু’জনের পাশাপাশি বসে থাকার ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন ওই কামরায় থাকা গ্রামেরই অন্য এক জন। রটিয়ে দেওয়া হয় যে, মহিলা ওই গ্রামবাসীর সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছেন। মহিলার পরিবারের সকলে অবশ্য তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন।

Advertisement

শনিবার রাতের ওই সভায় প্রায় শ’দুয়েক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন। বছর পনেরো আগে এক গোলমালের কারণে এ ধরনের সভা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এত বছর পরে তা আবার চালু করা হয়। গ্রামের ২৪ জন মাতব্বর সেখানে ছিলেন। সেখানকার সভাপতি ইদ্রিশ বিশ্বাস বলছেন, “ওদের বাড়ির লোকেদের ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এত বড় সাহস যে ওরা
আসেনি! আমাদের রায়ে সালিশি সভায় ২০০ জন সই করেছেন।” এই ভাবে সালিশি সভা করে কাউকে একঘরে করা যায় কি না সেই প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, “গ্রামে কেউ বেচাল করলে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার গ্রামের সভাই আমাদের দিয়েছে।” কিন্তু এ ক্ষেত্রে দোষ শুধু মহিলার কেন হবে? তাঁর পাশে যে পুরুষটি বসেছিলেন তিনিও তো তা হলে একই রকম দোষী। তাঁকে তা হলে সালিশি সভা শাস্তি দিল না কেন? ইদ্রিশের যুক্তি, “ও পুরুষ মানুষ। ওর কথা পরে ভাবা হবে। গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করছে মহিলারাই।”

ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য কামনা দুর্লভের মন্তব্য, “বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে কেউ আমার কাছে এসে অভিযোগ জানাননি। এ সব ক্ষেত্রে যেচে কিছু করা যায় না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement