সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। নিজেদের ভোট-ব্যাঙ্ক বাড়াতে তাই স্বনিযুক্তি প্রকল্পে ভর্তুকি বাড়িয়ে বেকার যুবক-যুবতীদের কাছে টানতে চাইছে তৃণমূল সরকার। এই প্রকল্পের ৬৫ শতাংশই ব্যাঙ্ক ঋণ। সরকারি ভর্তুকি ৩০ শতাংশ। পাঁচ শতাংশ সংগ্রহ করতে হবে ঋণগ্রহীতাকে। সরকার চাইছে, প্রয়োজনে সেই ঋণ শোধের ক্ষমতা যাচাই না করেই বেকারদের টাকা দিয়ে দিক ব্যাঙ্ক।
প্রকল্পটি বাম আমলের। তবে সেই আমলে তেমন গতি আসেনি। তৃণমূল জমানাতেও সরকার এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি। কিন্তু এখন ভোটের আগে বেকারদের মন পাওয়ার জন্য সরকারি তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রকল্পের দায়িত্বে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতর। ওই দফতর তথা রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে জানিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেকার ভাইবোনেদের ভর্তুকি দেওয়ার জন্য ১২৮ কোটি টাকা দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পে হস্তশিল্প, সূচিশিল্প, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম মেরামত, মোটরগাড়ি চালানো এবং মেরামত, কাগজের প্যাকেট তৈরি, আরও কিছু কর্মসংস্থান ও ব্যবসা খোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বেকারদের। প্রশিক্ষণের জন্য কোনও টাকা দিতে হবে না তাঁদের। পরে ব্যবসা করার জন্য ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাঙ্কের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকের বেকার যুবক-যুবতী স্বনিযুক্তির জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা। দিন কয়েক আগে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে বৈঠক ডেকে প্রকল্পের কাজে গতি আনতে বলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কতার্দের। এমনকী, ঋণ দিতে গিয়ে দরকার হলে নিয়ম-কানুন শিথিল করতেও বলা হয় ব্যাঙ্ককর্তাদের।
সাধনবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের ভর্তুকি বাবদ ৪২ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে দিয়ে রেখেছে। অথচ সেই টাকা দীর্ঘদিন ধরে পড়েই রয়েছে। কিন্তু টাকা তো ফেলে রাখার জন্য দেওয়া হয়নি!’’ সাধনবাবু স্বীকার করেছেন, বাম আমলের মতো তৃণমূল সরকারের প্রথম চার বছরও ওই প্রকল্প রূপায়ণে তেমন কোনও কাজ হয়নি। প্রকল্পের কাজে গতি আনতে কয়েকটি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক কর্তা ও জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করে সাধনবাবু জানান, এখন জরুরি ভিত্তিতে ঋণ দিতে হবে। এই ব্যাপারে যাতে কোনও ঢিলেমি না হয়, ব্যাঙ্ককর্তারা যেন তা নিশ্চিত করেন।
রাজ্যের যে ক’টি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ওই ঋণ দেওয়া হচ্ছে তার অন্যতম ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (ইউবিআই)। তারাই এই প্রকল্পে প্রধান ব্যাঙ্ক। ভর্তুকি বাবদ সরকারের দেওয়া টাকা ব্যাঙ্কে পড়ে থাকাটা ঠিক নয় বলে মনে করেন ওই ব্যাঙ্কের এক কর্তা। কিন্তু ঋণ দেওয়ায় ঢিলেমির অভিযোগও মানতে নারাজ তিনি। ঋণ দিতে গিয়ে নিয়ম শিথিল করারও পক্ষপাতী নন ব্যাঙ্ককর্তারা। তাঁরা মনে করেন, তাতে ঋণ শোধ না করার প্রবণতা বাড়বে।
বৈঠকে উপস্থিত এক ব্যাঙ্ককর্তার কথায়, ‘‘সামনে বিধানসভা ভোট। তার আগেই যাতে রাজ্য জুড়ে ঋণ দান সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন মন্ত্রী। কিন্তু বললেই তো হয় না। যিনি ঋণ পাবেন, তিনি সময়ে তা ফেরত দিতে পারবেন কি না, তা যাচাই করেই ব্যাঙ্ক প্রার্থী বাছাই করে। এর জন্য সঠিক অনুসন্ধানও করতে হয়।’’ ওই ব্যাঙ্ককর্তা জানান, অতীতে দেখা গিয়েছে, অনেকেই ব্যবসা করবেন বলে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু টাকা পেয়েই চুপচাপ। এমনকী, ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের টাকাও শোধ করেনি। সরকারি ভর্তুকির টাকা হাতে পেয়েই গুটিয়ে দিয়েছেন ব্যবসা।