প্রতীকী ছবি।
ঋণের ভারে জর্জরিত রাজ্যের কোষাগারকে আরও নড়বড়ে করেছে কোভিড-আমপানের জোড়া হামলা। প্রতিটি দফতরের খরচে লাগাম টেনেছে অর্থ দফতর। দফতরগুলিকে স্বনির্ভর হওয়ার নির্দেশ আগেই দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই নিজেদের পড়ে থাকা সম্পত্তি কাজে লাগাতে বেসরকারি সংস্থার হাত ধরছে উদ্যানপালন দফতর। প্রায় অচল কৃষি খামারগুলিকে সচল করে আয়ের উৎস তৈরি করার পথে হাঁটছে দফতর।
গোটা রাজ্যে উদ্যানপালন দফতরের হাতে ছয়-সাতটি কৃষি খামার রয়েছে। প্রতিটিতে সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেও তার সদ্ব্যবহার হয় না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষামূলক ভাবে একটি খামারকে ‘আউটসোর্স’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিটি খামারে প্রচুর উর্বর জমি, ভাল মানের বিভিন্ন ফলের গাছ ছাড়াও রয়েছে অফিসঘর, বিদ্যুৎ-জলের সংযোগ, গুদামঘর ইত্যাদি। নির্বাচিত সংস্থা গোটা পরিকাঠামো ব্যবহার করে বিভিন্ন ফলের চারা তৈরি করবে। শ্রমিক নিয়োগ, সার কেনা-সহ উৎপাদনের সব খরচ করতে হবে তাদেরই। পরের মরসুম থেকে উৎপাদিত চারা নির্ধারিত দামে কিনবে সরকার। পাশাপাশি, বছরে ন্যূনতম পাঁচ লক্ষ টাকা এবং মোট আয়ের একটি অংশ দফতরকে দেবে সংস্থাটি। দাম ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেবে সরকার।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এতে একদিকে যেমন খামারগুলি সচল হবে, তেমনই আয় বাড়বে সরকারের। আবার সরকার চারা কিনে নেওয়ায় সংস্থার বাজার ধরা নিয়েও চিন্তা থাকবে না। উদ্বৃত্ত অংশ বাজারজাত করে অতিরিক্ত আয়ও করতে পারবে সংস্থাটি। এরই সঙ্গে ওই খামারে মৎস্যপালনের মতো কাজও চাইলে করতে পারবে সংস্থা।
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে উৎপাদনের ভার নির্বাচিত সংস্থার উপর ছাড়া হবে। চুক্তি অমান্য করলে যখন খুশি তা বাতিল করার অধিকার থাকবে দফতরের হাতে। অন্যান্য বছর বাইরে থেকে টেন্ডার করে অনেক বেশি দামে চারাগাছ কিনে তা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করতে হত। এ বার নিজের জমিতে উৎপাদিত চারা বাজারমূল্যের থেকে অনেক অল্প দামে কিনে সেই কাজ হবে। ফলে খরচ বাঁচবে সরকারের।”
ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ার বড়জোড়ার খামারের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। আগামী বছর থেকে ওই খামারের আনুমানিক ৪০ একর জমিতে তৈরি কোন ফলের কত চারা সরকারকে দিতে হবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে দফতর। চুক্তি মেনে চাষ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন সরকারি বিশেষজ্ঞরা। চারার গুণমানও যাচাই করা হবে। এই খামার থেকে আম, পেয়ারা, পাতি ও কাগজি লেবু, মুসম্বি এবং বেদানার চারা কেনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ২০২৪ পর্যন্ত সরকারের এই চুক্তির মেয়াদ থাকবে।