Lightning

বজ্রপাত বেড়েছে প্রায় ৯৯ শতাংশ, সতর্কতা?

রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান অবশ্য সিআরওপিসি-র অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, শুধু চিঠি পাঠিয়ে কী হবে?

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৬:৩৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

রাজ্যে বজ্রপাতের হার ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বেড়েছে ৯৯ শতাংশ। কিন্তু তার পরেও বাজ পড়া নিয়ে সতর্কবার্তা জারির বিষয়টিকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল, রাজ্য সরকার তা দেয়নি। সোমবার রাজ্যে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনার পরে মঙ্গলবার সরকারের দিকে এমনই অভিযোগের আঙুল তুলল কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীনস্থ, ভারতীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত গবেষণা সংস্থা ‘ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট অবজ়ার্ভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিল’ (সিআরওপিসি)।

Advertisement

উল্লেখ্য, বাজ পড়ে প্রাণহানি ঠেকাতে ২০১৯ সালে দেশ জুড়ে একসঙ্গে ‘লাইটনিং রেসিলিয়েন্ট ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন’ শুরু করেছিল সিআরওপিসি, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিরিয়োলজি, ইন্ডিয়ান মেটিরিয়োলজিক্যাল সোসাইটি এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্ডিয়া। সিআরওপিসি-র চেয়ারম্যান এবং ‘লাইটনিং রেসিলিয়েন্ট ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন’-এর আহ্বায়ক কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সঞ্জয় শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, দেশের মধ্যে সব চেয়ে ভাল নেটওয়ার্ক রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের। কিন্তু তার পরেও এত জনের মৃত্যু উদ্বেগজনক তো বটেই, যথেষ্ট দুর্ভাগ্যেরও। সঞ্জয়বাবুর কথায়, ‘‘বাজ পড়ার সতর্কবার্তা জারির ক্ষেত্রে সরকারের গাফিলতি রয়েছে। আলাদা করে রেড অ্যালার্ট জারি করার দরকার ছিল। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময়ে এত প্রচার থাকলেও বাজ পড়ার আগে তা নেই কেন? তাই হয়তো একাধিক বার সরকারকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েও আমরা উত্তর পাইনি। অথচ ২০১৯-’২০ সালের তুলনায় ২০২০-’২১ সালে বজ্রপাতের হার বেড়েছে ৯৯.৭৬ শতাংশ।’’ সিআরওপিসি সূত্রের খবর, ২০১৯-’২০ সালে যেখানে রাজ্যে বজ্রপাতের সংখ্যা (লাইটনিং স্ট্রাইক) ছিল ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৭২৮, ২০২০-’২১ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ১৫ লক্ষ ২১ হাজার ৭৮৬। অর্থাৎ, প্রায় দ্বিগুণ!

রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান অবশ্য সিআরওপিসি-র অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘শুধু চিঠি পাঠিয়ে কী হবে? বাজ পড়ে প্রাণহানি রুখতে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দফতরের কাছে আসেনি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ভূমিকম্প বা বাজ পড়ার ক্ষেত্রে আগাম পূর্বাভাসের প্রযুক্তি আমাদের নেই।’’ বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রের খবর, বজ্রপাতের আগাম পূর্বাভাসের জন্য বছর দু’-তিন আগে একটি আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পূর্বাভাসকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছিল। বসানো হয়েছিল লাইটনিং সেন্সর। কিন্তু সেই সংস্থার প্রধান কার্যালয় আমেরিকায় হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগে অসুবিধা হচ্ছিল। কখনও বজ্রপাতের আধ ঘণ্টা আগে, কখনও আবার ১০ মিনিট আগে সরকারের কাছে পূর্বাভাস পৌঁছত। ফলে অনেকটাই দেরি হয়ে যেত। তার পরে ওই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ওই সংস্থার সঙ্গে ফের কথাবার্তা চলছে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টিতে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, তা নিয়ে সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার এশিয়া আঞ্চলিক অফিস সূত্রে আবার জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে ভারতের যে রাজ্যে সংস্থার তরফে সর্বাধিক বিপজ্জনক বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সতর্কবার্তা (‘ডেঞ্জারাস থান্ডারস্টর্ম অ্যালার্টস’ বা ডিটিএ) পাঠানো হয়েছিল, তার নাম পশ্চিমবঙ্গ! সেই বছর ভারতের সব রাজ্য মিলিয়ে মোট ১৮,০২৬টি ডিটিএ পাঠানো হয়েছিল। ওড়িশা ‘লাইটনিং কাউন্ট’-এ শীর্ষে থাকলেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সতর্কবার্তা সর্বাধিক ছিল পশ্চিমবঙ্গে। সংস্থার এশিয়া আঞ্চলিক ডিরেক্টর কুমার মার্গসহায়ম বলেন, ‘‘ডিটিএ ঘনত্বের দিক থেকে দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে পশ্চিমবঙ্গ। সেই মতো আমরা সতর্কবার্তা পাঠাতাম। তবে রাজ্য সরকার সেটা ব্যবহার করত কি না, তা বলতে পারব না। বর্তমানে আমরা অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, বিহার, ওড়িশা, কর্নাটক-সহ একাধিক রাজ্যের সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গেও কাজ করতে প্রস্তুত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement