চন্দননগরের আলোর কাজ চলছে। ছবি: তাপস ঘোষ।
এক সপ্তাহ পরেই মহালয়া। চন্দননগরের আলোর কারখানাগুলিতে শেষবেলায় ব্যস্ততা ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু মন ভাল নেই শিল্পীদের। তাঁদের কথায়, আর জি করের ঘটনার আবহে বাতিল হয়েছে বহু বরাত। তার উপরে নামী আলোকশিল্পী বাবু পালের মৃত্যু, দক্ষিণবঙ্গের একাংশ জুড়ে বন্যা— সব কিছুরই প্রভাব পড়েছে বলে জানাচ্ছেন আলোকশিল্পীরা।
চন্দননগরের আলোর কারখানাগুলিতে কাজের মধ্যে আর জি করের ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলছেই। অনেক শিল্পী-কারিগর নাগরিক প্রতিবাদেও শামিল হয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, ওই ঘটনার ছায়া তাঁরা আলোকসজ্জায় না রাখারই পক্ষপাতী। ওই ঘটনাকে আলোয় ফুটিয়ে তুলতে মন সায় দেয়নি। তা ছাড়া, এমন বরাতও আসেনি। তাই চন্দননগরের আলোয়, যেখানে সাম্প্রতিক ঘটনার কিছু না কিছু ছাপ থাকে বরাবর, এ বারে আর জি করের ঘটনার কোনও কাজ নেই।
তবে ওই ঘটনার জেরে যে বিভিন্ন কমিটি বরাত বাতিল করেছে, তা জানাচ্ছে আলোকশিল্পীদের সংগঠন ‘চন্দননগর লাইট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-ই। সার্বিক পরিস্থিতিতে আর্থিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকের দাবি, সাধারণত আলোকসজ্জা নিয়ে যাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটি বরাতের ৫০-৬০ শতাংশ টাকা মিটিয়ে দেয়। এ বার ২৫-৩০ শতাংশেই তা সীমাবদ্ধ। নোটবন্দি, জিএসটি, তার পর করোনা অতিমারি— ২০১৬ থেকে গত কয়েক বছরে একের পর এক পরিস্থিতিতে ব্যবসা মার খেয়েছে। অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ানো গিয়েছিল গত দু’বছরে। এ বার ফের কাজে ভাটা।
সংগঠনের এক কর্তার কথায়, “কিছু বরাত বাতিল হয়েছে। মুশকিল হচ্ছে, সেই আলোর কাঠামো তৈরির পরে বাতিল হয়েছে। ফলে, সরঞ্জাম থেকে শ্রমিক বা আনুষঙ্গিক খরচ যা হয়েছে, এখনই ফেরত আসার উপায় নেই। আর, কোনও কোনও পুজো এ বার বাজেট বাড়াতে চাইছে না!”
তা হলে কারখানাগুলিতে কী হচ্ছে? হরেক পশুপাখি থেকে ফুল, বাদ্যযন্ত্র থেকে পুতুল, দেবদেবী, রাজস্থানী নাচ, ভূতের নৃত্য— সবই শোভা পাচ্ছে আলোর বাহারে। নানা জায়গায় আলো পৌঁছেও গিয়েছে। সদ্যপ্রয়াত আলোকশিল্পী বাবু পালের মেয়ে সুশ্বেতা জানান, শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের আলো যাচ্ছে তাঁদের কারখানা থেকে। সঙ্গে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, ব্যান্ডেলের সাহাগঞ্জ, দমদমের নাগেরবাজার, দিল্লির পঞ্জাবিবাগ। তপন ইলেকট্রিক্যালস কলকাতার পাঁচটি পুজোয় আলো লাগাচ্ছে। তবে সামগ্রিক ভাটার টান পুরো আটকানো যায়নি।