নারী দিবসের পদযাত্রায় কলকাতার রাজপথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
সামনেই জনগর্জন সভা তৃণমূলের। তাতে সন্দেশখালি থেকে এক লক্ষ কর্মী-সমর্থককে কলকাতায় নিয়ে যেতে হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। যদিও তার তিন দিন আগে, বৃহস্পতিবার কলকাতার রাজপথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নারী দিবসের পদযাত্রায় পা মেলালেন সন্দেশখালির দেড়শোর মতো মহিলা। সংখ্যাটি যে খুব বেশি নয়, তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বও মানছেন। বিশেষ করে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার জন্য ভিড় দেখার পরে।
সন্দেশখালি বিধানসভার প্রতিটি পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর বারাসতের সভায় ন’টি বাসে করে কয়েকশো মহিলা বিজেপি কর্মী-সমর্থক গিয়েছিলেন। উত্তম সর্দার থেকে শেখ শাহজাহান— তৃণমূলের সন্দেশখালি সামালানো নেতাদের অভাবই কি এই দৃশ্য বদলের পিছনে?
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, যে সন্দেশখালি পঞ্চায়েত এলাকা দু’মাস ধরে উত্তপ্ত, সেখানকার দাসপাড়া, পোলপাড়া থেকে মাত্র ২০-৩০ জন ও জেলিয়াখালি, কোরাকাটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে মাত্র ৫-১০ জন মহিলা এ দিন দু’টি বাসে কলকাতায় মমতার সভায় যান। একমাত্র বেড়মজুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকা থেকে তুলনায় বেশি সংখ্যায় মহিলা গিয়েছিলেন।
সন্দেশখালি ২ ব্লক তৃণমূলের একাধিক পঞ্চায়েত এলাকার অঞ্চল সভাপতি ও প্রধানেরা দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় মহিলাদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের অনেক স্থানীয় নেতার দাবি, সন্দেশখালির আন্দোলনের জেরে এবং শাহজাহান ও শিবপ্রসাদ গ্রেফতার হওয়ায় সাংগঠনিক ভাবে দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। তা কাটাতে ঘন ঘন এখানে আসছেন মন্ত্রী-নেতারা।
ব্রিগেডে সভার ৭২ ঘণ্টা আগে এ দিনও ন্যাজাটে প্রস্তুতিসভা করেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু ও পার্থ ভৌমিক। তাঁরা সন্দেশখালি বিধানসভা এলাকা থেকে এক লক্ষ কর্মী-সমর্থককে ব্রিগেডে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেন। সন্দেশখালির বিধায়ক তৃণমূলের সুকুমার মাহাতো বলেন, “দিদির পদযাত্রায় তো সন্দেশখালি থেকে মহিলাদের প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছিল মাত্র। জনগর্জন সভায় যাওয়ার জন্য দলকে বলেছি সন্দেশখালিতে ১৫০টি বাস পাঠাতে।”
বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুকল্যাণ বৈদ্য বলেন, “তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরতে শুরু করেছে সন্দেশখালিতে। আগের মতো আর জোরজুলুম করে লোক নিয়ে যেতে পারবেন না মিটিং-মিছিলে।” সিপিএম নেতা নিরাপদ সর্দার বলেন, “পরিস্থিতি বদলেছে, মানুষ আর তৃণমূলের নেতাদের ভয় পাচ্ছে না। হাওয়া বদলাচ্ছে।”
বুধবার যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সভায় গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে জানান, এ বার সভা থেকে ফিরে হুমকির মুখে পড়তে হয়নি। আগে ঘরোয়া সভায় গেলও মার খেতে হত বলে অভিযোগ। তবে প্রধানমন্ত্রীর সভার দিন সকাল ১০টায় বিজেপি সমর্থক এক মহিলাকে থানায় ডেকে পাঠানো ঘিরে সে দিন বিক্ষোভ হয়েছিল।