সনিয়া গাঁধীর আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার জন্য বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানালেন কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। আবার একই দিনে সিপিএম-সহ ১৬টি বামপন্থী দল বিধানসভার বাইরে অভিযোগ তুলল, তৃণমূল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করছে। বৃহস্পতিবার ১৬ বাম দলের তরফে আয়োজিত কনভেনশনে এই প্রস্তাবই গৃহীত হয়েছে।
জওহরলাল নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দিল্লিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মমতাকে আমন্ত্রণ করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। মমতা সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মানসবাবু। মমতা বলেছিলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক বাতাবরণে নেহরুর মতো ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট করা প্রয়োজন। একই কথা বলেছেন মানসবাবুও।
দিল্লির ওই সম্মেলনে প্রকাশ কারাটকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সনিয়া। কিন্তু বামেরা তৃণমূলকে গণতান্ত্রিক বা ধর্মনিরপেক্ষ, কোনও শংসাপত্রই দিতে রাজি নয়! বরং এ দিনের কনভেনশনে তাদের গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, এখানে বিজেপি-র বৃদ্ধির জন্য তৃণমূলই মূলত দায়ী। বলা হয়েছে, তৃণমূলের শাসনে গণতন্ত্রের উপরে লাগাতার আক্রমণ, দুষ্কৃতীদের দাপট, পুলিশ-প্রশাসনকে স্বাভাবিক কাজ করতে না দেওয়ায় সব ধরনের সাম্প্রদায়িক শক্তি বেড়ে উঠেছে।
ওই কনভেনশনের সভাপতি বিমান বসু জানান, ৬ ডিসেম্বর তাঁরা সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী সভা করবেন। বিজেপি একটি সম্প্রদায়ের পক্ষ নিয়ে চলছে, আর রাজ্যের শাসক দল আর এক পক্ষ নিয়ে চলছে অভিযোগ করে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “গণতন্ত্র আক্রান্ত হলে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী আন্দোলনেরও অসুবিধা হয়।”
বিধানসভায় এ বার নেহরুর ১২৫তম জন্মদিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের দাবি করতে গিয়েই এ দিন মানসবাবু দিল্লির সম্মেলনের প্রসঙ্গ তোলেন। তখনই সনিয়ার ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য মমতাকে (তিনি অবশ্য সভায় ছিলেন না) ধন্যবাদ জানান। কংগ্রেসেরই একাংশের বক্তব্য, আব্দুল মান্নানের মতো দলীয় নেতারা যখন রাজ্যে বামেদের সঙ্গে জোট চেয়ে দিল্লিতে দরবার করছেন, তখন নেহরু-প্রসঙ্গে সুযোগ পেয়েই মানসবাবু তৃণমূল নেত্রীকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। মানসবাবু অবশ্য ব্যাখ্যা দেন, তিনি নেহাতই নেহরুর জন্মদিনের প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। এই উপলক্ষে আজ, শুক্রবার কলকাতায় সভা করবেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার। বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের তরফে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, নেহরুকে নিয়ে বছরভর কর্মসূচির আয়োজন রয়েছে।
প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়কে সামনে রেখে যে ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরাম’ তৈরি হয়েছে, তারা আজ, শুক্রবার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ফোরাম মিছিল করবে। তাতে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে সিপিএমের নেতা-কর্মীরাও ঝান্ডা থাকবেন। মিছিলের সমর্থনে এ দিন বিবৃতি দিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, অশোকনাথ বসু-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ। তাঁদের মধ্যে সূর্যবাবুও আছেন।