আলিপুর সংশোধনাগার থেকে বেরোচ্ছেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
গ্রেফতারের ১০ দিন পরে জামিনে ছাড়া পেলেন সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ ১৬ জন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়া মীনাক্ষীকে স্বাগত জানাতে জড়ো হওয়া সিপিএমের যুব ও ছাত্র নেতাদের আবার ধরপাকড় করে পুলিশের তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ঘিরে তৈরি হল নতুন বিতর্ক। ধৃতদের ছাড়া না হলে বিক্ষোভে ‘বাংলা অচল’ করে দেওয়া হবে বলে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন হুমকি দেওয়ার পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে লালবাজার থেকে।
ছাত্র-নেতা আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী-সহ ১৬ জন। তিন বার আবেদন নাকচের পরে সোমবার হাওড়া জেলা আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছিল। মীনাক্ষী এ দিন ছাড়া পান আলিপুর জেল থেকে। বাকি ১৫ জনকে হাওড়ার মল্লিকফটকে জেলের বাইরে ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআই কর্মী-সমর্থকেরা স্বাগত জানান। একই উদ্দেশ্যে রাসবিহারী জমায়েত করেছিল সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন। তাদের অভিযোগ, সেখান থেকে যুব ও ছাত্র নেতাদের টানাহ্যাঁচড়া করে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, কলকাতা জেলার সম্পাদক আতিফ নিসার ও সভাপতি দেবাঞ্জন দে, ডিওয়াইএফআইয়ের কলকাতা জেলা সভাপতি বিকাশ ঝা-সহ বেশ কয়েক জন। পুলিশের মারে এসএফআই রাজ্য কমিটির সদস্য রৌদ্রশেখর মজুমদার অসুস্থ হয়ে পড়েন, রাসবিহারীতে চায়ের দোকানে দাঁড়ানো এক ছাত্রী দীধিতি বসুর পা ভেঙে যায় বলেও অভিযোগ। ছাড়া পেয়ে রাতে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন সৃজনেরা। পুলিশ সূ্ত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, ওখানে জমায়েতের কোনও অনুমতি ছিল না।
ঘটনার নিন্দা করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘অন্যায় ভাবে জেলে আটক মীনাক্ষীদের ছাড়িয়ে আনতে যারা গিয়েছিল, তাদের আবার টেনে-হিঁচড়ে গ্রেফতার করল রাষ্ট্রীয় গুন্ডারা! এ ভাবে অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না।’’ প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মন্তব্য, ‘‘এই সরকারের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে! জোর করে ভোটে জিতে তারা এখন প্রতিবাদকে ভয় পাচ্ছে। সুদীপ্ত গুপ্ত, নাসিরুদ্দিন, আনিস খান— পুলিশের হাতে সব মৃত্যুর বিচারই মানুষ করবে।’’
জেল থেকে বেরিয়ে মীনাক্ষী এ দিন বলেছেন, ‘‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল আনিস খানের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে। হত্যাকারীরা এখনও ধরা পড়েনি। ছাত্র-যুবদের আন্দোলনও বন্ধ হয়নি। শুধু বলতে চাই, আনিসের খুনিদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চলবে। তার জন্য আবার জেলে যেতে হলে যাব!’’ পরে দীনেশ মজুমদার ভবনে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান মীনাক্ষী। বাম সূত্রে বলা হয়েছে, এর পরে তাঁর আঘাতের চিকিৎসা করানো হবে। সিট গঠনের ১৫ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তদন্ত আর না এগোনোর অভিযোগ সামনে রেখে ‘নো ওয়ান কিল্ড আনিস খান’ স্লোগান দিয়ে আজ, বুধবার বিকালে কলেজ স্ট্রিট থেকে মৌলালি পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে বাম যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলি।