ফাইল চিত্র
আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৬তম জন্মদিন ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবেই পালন করবে বামফ্রন্ট। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে এ বার ওই দিন কোনও মিছিল বা পদযাত্রার আয়োজন হচ্ছে না। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে নেতাজি মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছোট সভা করা হবে বলে ঠিক করেছে রাজ্য বামফ্রন্ট ও নেতাজি জয়ন্তী কমিটি।
বামফ্রন্টের বৈঠকে মঙ্গলবার নেতাজির জন্মদিন উদযাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ বার বড় কোনও অনুষ্ঠান করা যাবে না। তবে নেতাজির প্রতিষ্ঠিত দল ফরওয়ার্ড ব্লক ২৩ তারিখ তাদের রাজ্য দফতরে দলীয় কর্মসূচির পরে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত অল্প লোকজন নিয়ে মিছিল করবে। নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের জন্য সুভাষচন্দ্রের জীবন ও সংগ্রামের উপরে রাজ্য সরকার যে ট্যাবলোর প্রস্তাব দিয়েছিল, তা বাতিল হওয়ার প্রসঙ্গেও এ দিনের বৈঠকে কথা হয়েছে। পরে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজির চিত্র ও কর্ম সংবলিত ট্যাবলোটি বাতিল করে দেশের ঔপনিবেশিকতা বিরোধী সংগ্রামের মহান ঐতিহ্যকে অস্বীকার করেছে। রাজ্য সরকার প্রেরিত এই ট্যাবলোটিকে প্রদর্শন না করার সিদ্ধান্ত অবশ্যই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত বলে বামফ্রন্ট মনে করে’। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এখন যা-ই কারণ দেখান না কেন, বামফ্রন্ট কেন্দ্রের ‘অনৈতিকতার’ তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বলে বিমানবাবু মন্তব্য করেছেন। ‘দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজির সংগ্রামী চেতনার প্রকারান্তরে অবলুপ্তি ঘটানো এবং ইতিহাসের সাম্প্রদায়িক হিন্দুকরণের অপচেষ্টার’ প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনও।
রাজনৈতিক স্তরে বামফ্রন্ট ‘দেশপ্রেম দিবস’ পালনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশিই এই বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতেও। রাজ্যে সরকারি ভাবে কেন ‘দেশপ্রেম দিবস’ পালন হবে না, সেই প্রশ্নে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লা। বামফ্রন্ট সরকারের শেষ লগ্নে এই মর্মে নির্দেশিকা জারি হয়েছিল, সরকারি স্তরে ‘দেশপ্রেম দিবস’ পালিত হয়েছিল নেতাজির জন্মদিনে। তার পরে কেন আর ২৩ জানুয়ারি সরকারি ভাবে ‘দেশপ্রেম দিবস’ পালন করা হয়নি, পুরনো নির্দেশ বাতিল করা হয়েছে কি না, সেই সব প্রশ্ন তুলে তথ্যের অধিকার আইনে রাজ্যের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন ফরিদ। একাধিক চিঠিও দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে। কিন্তু সদুত্তর না পেয়ে হাই কোর্টে আবেদন দায়ের করেন তিনি।
হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের এজলাসে এ দিন মামলার শুনানিতে এই বিষয়ে বক্তব্য জানানোর জন্য এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু তত দিনে নেতাজির জন্মদিন পেরিয়ে যাবে বলে আগামী ২১ জানুয়ারি রাজ্যের বক্তব্য জানাতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। ফরিদের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে সরকার বদলে যেতেই পারে। কিন্তু আগের সরকারি সিদ্ধান্ত খারিজ করতে হলে নতুন নির্দেশিকা বা সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তেমন নির্দেশ হয়েছে কি? কেন রাজ্যে সরকারি ভাবে ‘দেশপ্রেম দিবস’ পালন হচ্ছে না, সেই প্রশ্নের আমরা উত্তর চাই।’’