State News

রাস্তায় বিক্ষোভের ঢেউ, উজ্জীবিত বাম-কংগ্রেস

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেড় দিনের কলকাতা সফর চলাকালীন এই শহরে তো বটেই, রাজ্যের সর্বত্র কালো পতাকা-বেলুন নিয়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল সব বাম দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২৪
Share:

ছাত্রদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে তারা ভোট পেয়েছিল মাত্র ৭%। আসন জোটেনি একটাও। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকে (এনআরসি) হাতিয়ার করে রাজ্যে মোদী-বিরোধী বিক্ষোভে সামনের সারিতে উঠে এল সেই বামেরাই। সঙ্গী কংগ্রেস।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেড় দিনের কলকাতা সফর চলাকালীন এই শহরে তো বটেই, রাজ্যের সর্বত্র কালো পতাকা-বেলুন নিয়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল সব বাম দল। ছাত্র ও যুবদের সামনে রেখে সেই প্রতিবাদে তারা আহ্বান জানিয়েছিল কংগ্রেসকে। সেই কর্মসূচি মেনেই শনিবার দিনভর বিক্ষোভ-প্রতিবাদে উত্তাল হল শহর। প্রতিবাদ মিছিল দেখা গেল রাজ্যের সব জেলায়। বিমানবন্দর থেকে রাজভবন আকাশপথে এবং মিলেনিয়াম পার্ক থেকে বেলুড় মঠ জলপথে— নাগরিক প্রতিবাদের জেরেই সড়কপথ এড়িয়ে মোদীর এমন সফর বলে মনে করছেন বাম নেতৃত্ব। নেতা থেকে সমর্থক, প্রৌঢ় থেকে পড়ুয়া, সব ধরনের প্রতিবাদীরা এ দিন যে ভাবে বিক্ষোভের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছিলেন, তাতে উজ্জীবিত হয়ে সিপিএম-সহ ১৭ বাম দল আজ, রবিবার সকালে ফের ধর্মতলায় জমায়েতের ডাক দিয়েছে।

সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রথম মোদীর কুশপুতুল জ্বালানো শুরু। ধর্মতলায় রাস্তায় বসে গান গেয়ে, স্লোগান দিয়ে, কালো বেলুন ও ফানুস উড়িয়ে প্রতিবাদের আঁচ গনগনে রেখেছিলেন বাম ছাত্র ও যুবরা। ফৈয়াজ আহমেদ ফৈয়াজের লেখা ‘হম ভি দেখেঙ্গে’ উদ্ধৃত করা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদীদের মাঝে এসে বসেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। সিএএ এবং এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনে তাঁকেই সামনে এগিয়ে দিয়েছে সিপিএম। সেলিম বলেন, ‘‘লাল-বাল-পাল ডাক দিয়েছিলেন, সাইমন গো ব্যাক! আজ বাংলা ডাক দিচ্ছে, মোদী গো ব্যাক।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দল এগোচ্ছে, মোদীকে ছবি দেখাল বিজেপি

এরই মধ্যে কংগ্রেসের ছাত্র ও যুবরা চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন দফায় দফায় রাজভবনের কাছে বিক্ষোভ দেখানোর। রাজভবনের দিকে সমস্ত রাস্তাই ব্যারিকেড দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল পুলিশ। প্রদেশ যুব কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদের সভাপতি সৌরভ প্রসাদের নেতৃত্বে এক দল কর্মী-সমর্থক রাজভবনের উত্তর ফটকের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল জ্বালাতে গেলে তাঁদের তাড়া করে পুলিশ। যুব কংগ্রেস নেতা হবিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় হেয়ার স্ট্রিট থানায়।

প্রতিবাদে শামিল মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র।

রাজভবনের ভিতরে যখন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক চলছে, সেই সময়ে আবার গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের সামনে আচমকা মোদীর কুশপুতুল নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এক দল যুব কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদ কর্মী। তাঁদের সমর্থক এক যুবক ‘গো ব্যাক’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাজভবনের উত্তর ফটকের কাছে চলে যান। পুলিশ যখন তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তিনি বলতে থাকেন তৃণমূলের পুলিশ কেন মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ আটকাচ্ছে? কলকাতা ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান কলেজ স্ট্রিটে। যুব কংগ্রেসের আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা আবার দীপিকা পাড়ুকোনের ‘ছপক’ ছবির টিকিট বিলি করে বিজেপির বয়কটের প্রতিবাদ জানান।

মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত রাস্তায় বিক্ষোভে শামিল হয় সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, এসইউসি, পিডিএস এবং তাদের নানা শাখা সংগঠনও। ধর্মতলারই ওয়াই চ্যানেলে প্রতিবাদ-অবস্থানে ছিলেন প্রসেনজিৎ বসুরা। মোদী-অমিত শাহের বিভাজনের নীতির বিরুদ্ধে তাঁরা দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন। বামেদের অভিযোগ, বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে বাগবাজার ঘাটে পুলিশের হাতে প্রহৃত হয়েছেন তিন ছাত্র। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে শ্যামপুকুর থানা। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন বিজেপি ও তৃণমূলের ‘ছদ্ম লড়াইয়ের শরিক’ না হয়ে বাম-কংগ্রেসের আন্দোলনের পাশে থাকার।

ধর্মতলায় যুব কংগ্রেসের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

মোদী-বিরোধী বিক্ষোভের আবহেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতার একান্ত বৈঠক ঘিরে প্রশ্ন তুলেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। তৃণমূলের তরফে তাই এ দিন বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বৈঠক ছিল সরকারি স্তরের। সিএএ-এনআরসি’র প্রতিবাদে প্রথম পথে নেমেছেন তৃণমূল নেত্রীই। যাঁরা ঘরে বসে নানা কথা বলছেন, তাঁদের এটা মাথায় রাখা উচিত!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement