বামফ্রন্টের অবস্থানে বিমান বসু। সিইএসসি-র সদর দফতরের সামনে। (ডান দিকে) সল্টলেকের বিদ্যুৎ ভবনের সামনে গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতিবাদ আন্দোলন থেকে প্রতিরোধ যে দিনে দিনে আরও তীব্র হবে, ফের সেই ইঙ্গিত দিয়ে রাখল বামেরা। বিদ্যুৎ মাসুল বৃদ্ধি থেকে শুরু করে টেট কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ, যে কোনও বিষয়েই এখন রাস্তায় নেমে আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে বলে বুধবার ফের জানালেন বাম নেতৃত্ব। বৃহত্তর প্রতিরোধের পথে গিয়েই শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে তাঁরা শাসক দলকে জবাব দিতে চান, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
বিদ্যুৎ মাসুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ দিন থেকে সিইএসসি-র সদর দফতর ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ধর্না-অবস্থান শুরু করেছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। একই দাবি নিয়ে সল্টলেকের বিদ্যুৎ ভবনের সামনেও অবস্থান চলছে। কলকাতার অবস্থান-মঞ্চে আজ, বৃহস্পতিবার পাঁচটি জেলার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশ করবেন রাজ্য বাম নেতৃত্ব। দাবি জানাতে যাবেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছেও। তার আগে রাতটা অবস্থান-মঞ্চেই কাটাবেন কলকাতার বাছাই করা কিছু বাম নেতা-কর্মী।
বিদ্যুৎ নিয়ে এই অবস্থানের প্রথম দিনে সব বাম শরিক দলের নেতারাই সাম্প্রতিক নবান্ন অভিযান ও সাধারণ ধর্মঘটের উদাহরণ টেনে তৃণমূলের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তীব্রতর করে তোলার ডাক দিয়েছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী যেমন বলেন, ‘‘ধৈর্যের সীমা ছাড়াচ্ছে। সবে ব্যারিকেড ভাঙা শুরু হয়েছে ২৭ অগস্ট থেকে! এই সরকার রক্তচক্ষু দেখিয়ে প্রতিবাদ আটকে রাখতে পারবে না।’’ শুধু সই সংগ্রহ করে বা রাজ্যপালের কাছে দাবি জানিয়েই যে বিদ্যুৎ নিয়ে তাঁদের আন্দোলন শেষ হবে না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন সুজনবাবু। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে তাঁর সতীর্থ, শিলিগুড়ির মেয়র অশোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রতি পদে এই সরকার মানুষকে প্রতারণা করছে। সর্বস্তরে আক্রমণ হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখন বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা মুখ বুজে আর সব মেনে নেবেন না! দিনে দিনে প্রতিরোধের তীব্রতা বাড়বে।’’ বৃহত্তর প্রতিরোধ গড়ে তুলেই শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে শাসক দলকে ‘যোগ্য জবাব’ দেওয়া হবে বলেও এ দিন আত্মপ্রত্যয়ী শুনিয়েছে অশোকবাবুকে।
রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, সাংসদ মহম্মদ সেলিম, সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, প্রবীর দেব, আরএসপি-র তপন মিত্র বা ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত রায়, শামিমা রেহান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন এ দিনের অবস্থানে। সামগ্রিক ভাবে প্রতিরোধের মেজাজকে উৎসাহ দিতে চেয়েই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও বলেন, ‘‘যাঁরা এখনও শুয়ে আছেন, তাঁদের উঠে দাঁড়াতে হবে। গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে হবে। রাস্তাই এখন আমাদের রাস্তা!’’
তথ্য দিয়ে বাম নেতারা দেখাচ্ছেন, ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার সময় সিইএসসি-র বিদ্যুৎ মাসুল ছিল ইউনিট প্রতি ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ। ভারতের কোনও রাজ্যেই এই হারে বিদ্যুতের মাসুল বাড়েনি। সিইএসসি-র এক কর্তার পাল্টা দাবি, দিল্লি বা মুম্বইয়ের চেয়ে তাঁদের গড় বিদ্যুৎ মাসুল কম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়েও পরিষেবা দিয়ে যেতে পারে। কারণ, তাদের পাশে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলি থাকে। কিন্তু কোনও বেসরকারি সংস্থা আর্থিক লোকসান করে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিয়ে যেতে পারে না।’’ বাম নেতারা আবার
পাল্টা পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়ছে বলে কারণ দেখিয়ে মাসুল বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সংস্থার লাভের অঙ্ক বেড়েই চলেছে!
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিশেষ মুখ খুলতে চাননি। তাঁদের দাবি, গত কয়েক বছরে মাসুল যা বেড়েছে, তা রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নির্দেশেই বেড়েছে। তাঁদের দাবি, বিপিএল গ্রাহক, বিদ্যালয়ের মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাসুল কমানোও হয়েছে। পক্ষান্তরে বামেদের মতোই বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন অ্যাবেকা-র সম্পাদক প্রদ্যোৎ চৌধুরীরও দাবি, দুই সংস্থাই মাসুল কমিয়ে অর্ধেক করে দিলেও তাদের লাভ থাকবে। বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত এর আগে বিধানসভায় বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, বিদ্যুৎ মাসুল কমেছে। এই আন্দোলন চলাকালীন বাম নেতারা পরিসংখ্যান নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর একান্ত সচিব সুপ্রিয় অধিকারী দু’বারই চিঠির জবাব দিয়ে জানিয়েছেন, ব্যস্ত থাকায় মন্ত্রীর দেখা পাওয়া যাবে না। সরকারের এই মনোভাবের বিরুদ্ধেই সরব বামেরা।